যেয়ো না রানী, ফিরে এসো। আমি বলছি ফিরে এসো।
মোতির মা। এত ভোর বেলায় আকাশে কোন্ তারার দিকে তাকিয়ে আছ ভাই? শোবে চলো।
কুমুদিনী। আমার নিষ্ঠুর ঠাকুরের দিকে। তাকে আমি বলেছি, আমার বুক নিংড়িয়ে তুমি পুজো চাও, তাই দেব আমি, কিছুতেই হার মানব না, হার মানব না।
মোতির মা। তোমার ঠাকুরই হার মানবেন, নিষ্ঠুরের আসন টলবে।
কুমুদিনী। দুঃখকে আমি ভয় করি নে ভাই, দুঃখ আমার সওয়া আছে শিশুকাল থেকে। কিন্তু ঘৃণা! যা অন্যায় যা অশুচি তার মধ্যে দিয়ে কেমন করে কী সান্ত্বনা পাব, আমার যে তা জানা নেই। দাদার কাছে মানুষ হয়েছি, তাই এই পথটা চেনবার দরকার হয় নি। কিন্তু ঘৃণাও করব জয়, তার পরে আর আমার ভাবনা কিসের!
মোতির মা। তোমার ঠাকুরকে যে যত বেশি করে দেয় তার উপর তাঁর দাবি আরো যেন বেড়েই চলে, কিছুতে মেটে না তাঁর পাওনা। এর মানে কিন্তু আমরা বুঝতেই পারি নে।
কুমুদিনী। ভক্তকে যাচাই করে নেন ; তাঁর চরণতলে বসবার যোগ্য হতে হবে তো।
মোতির মা। সত্যি করে বলি, রাগ করিস নে ভাই — পায়ের তলায় এমনি করে দলন করে তার পরে পায়ের তলায় বসবার যোগ্য করবেন ঠাকুর, তার মানে বুঝতে পারি নে আমরা।
কুমুদিনী। আজ আমার কেবলই মনে হচ্ছে, ধ্রুবকে যেমন দেখা দিয়েছিলেন তেমনি করেই এখনি যদি নির্মল মূর্তিতে দেখা দেন, যদি সত্যি করে তাঁর পা ছুঁতে পারি, তবেই এ মলিন দেহ শুদ্ধ হয়, নইলে এই অশুচিকে বহন করে আমি আর পারছি নে, নিজের মধ্যে থেকে ছুটে বেরিয়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
কাগজের মোড়ক হাতে মোতিলালের প্রবেশ
এসো গোপাল, এসো আমার কোলে। দুষ্টু ছেলে, এ দুদিন আস নি কেন?
কুমুর গলা জড়িয়ে ধরে
মোতিলাল। জ্যাঠাইমা, তোমার জন্যে কী এনেছি বলো দেখি।
কুমুদিনী। সোনা এনেছ, সাত-রাজার-ধন মানিক এনেছ। কই দেখি।
মোতিলাল। আমার পকেটে আছে।
কুমুদিনী। আচ্ছা, তবে বের করো।
মোতিলাল। তুমি বলতে পারলে না!
কুমুদিনী। আমার বুদ্ধি নেই, যা চোখে দেখি তাও বুঝতে পারি নে, যা না দেখি তা আরো ভুল বুঝি।