একটা পান নেও, দোক্তা খাওয়া অভ্যেস আছে?
কুমুদিনী। না।
মুখে একটিপ দোক্তা নিয়ে শ্যামার প্রস্থান
ছি ছি, কী বললেন উনি! স্বামীর বয়স বেশি বলে তাঁকে ভালোবাসি নে, এ কথা কখনোই সত্য নয় — লজ্জা, লজ্জা, এ যে ইতর মেয়েদের মতো কথা। ছোটোবউ, আমাকে একবার তোমাদের পুজোর ঘরে নিয়ে চলো।
মোতির মা। আর তো দেরি নেই, সময় হয়ে এল।
কুমুদিনী। সেখানে একবার যদি না যেতে পারি হাঁপিয়ে মরে যাব।
মোতির মা। আচ্ছা চলো, দেরি কোরো না।
কুমুদিনী। আমি ঠাকুরের পায়ে কেবল একটি ফুল দিয়ে আসব, আর কিছুই না।
[ উভয়ের প্রস্থান
মধুসূদন ধীরে ধীরে এসে পুঁতির থলি দেরাজ থেকে
বের করে নিয়ে পকেটে ভরল
শ্যামাসুন্দরীর প্রবেশ
শ্যামাসুন্দরী। অসময়ে ঠাকুরপো যে এখানে? শূন্য খাঁচার দিকে বেড়ালের মতো তাকিয়ে আছ। লোকে বলবে কী? বাড়াবাড়ি ভালো নয়।
মধুসূদন। চুপ করো, তোমার রসিকতা ভালো লাগছে না।
শ্যামাসুন্দরী। আমার মুখে ভালো লাগছে না, রস জোগাবার লোক এসেছে যে।
মধুসূদন। আজকাল তোমার আস্পর্ধা কেবল বেড়ে যাচ্ছে, আগে এমন ছিল না।
শ্যামাসুন্দরী। আদর কমলেই আস্পর্ধা বাড়ে — কী আর রইল বাকি যে ভয় করব?
মধুসূদন। বাকি রয়েছে এখানে তোমার আশ্রয়।
শ্যামাসুন্দরী। এক বউকে এনেছ বলে বাড়ির আর-এক বউকে রাখবার জায়গা যদি না থাকে তা হলে গলায় দড়ি দিয়ে মরবারও তো গাছতলাটা মিলবে।
মধুসূদন। একটা কথা বলে রাখি, বড়োবউয়ের সঙ্গে যদি মিলে মিশে না থাকতে পার তা হলে রজবপুরের বাসায় তোমাকে পাঠিয়ে দেব।
শ্যামাসুন্দরী। বড়োবউয়ের সঙ্গে আমার মেলামেশার কথা ভেবো না, নিজের কথাটা ভেবে দেখো। তুমি আমি এক দরের লোক, মিলতে পেরেছি খুব সহজে, এত সহজে যে লোকে কানাকানি করেছে। তামায় পিতলে গলিয়ে এক করা যায়, কিন্তু তামায় হীরেয় গলিয়ে মেলানো যায় না।