কুমুদিনী নিরুত্তর
এ আংটি তোমাকে দিলে কে?
কুমুদিনী নিরুত্তর
তোমার মা নাকি?
সংকুচিত স্বরে
কুমুদিনী। দাদা।
মধুসূদন। দাদা। সে তো বোঝাই যাচ্ছে। নইলে এমন দশা কেন? শনির সিঁধকাঠি তোমার দাদাকেই মানায়। এ আমার ঘরে আনা চলবে না এই বলে গেলুম। মনে রেখো।
[ প্রস্থান
কুমুদিনী দ্রুতপদে লেখবার টেবিলের দেরাজ খুলে ঝুলি রেখে দিলে। দাদার টেলিগ্রামের কাগজ
বুকের কাপড় থেকে বের করে মাথায় ঠেকালে
শ্যামাসুন্দরী। মোতির মা তোমাকে একটু ছুটি দিয়েছে সেই ফাঁকে এসেছি ; কাউকে তো কাছে ঘেঁষতে দেবে না, ঘিরে রাখবে তোমাকে, যেন সিঁধকাঠি নিয়ে বেড়াচ্ছি, বেড়া কেটে তোমাকে চুরি করে নিয়ে যাব। আমায় চিনতে পারছ না ভাই, আমি তোমার বড়ো জা, শ্যামাসুন্দরী — তোমার স্বামী আমার দেওর। আমরা তো ভেবেছিলুম শেষ পর্যন্ত জমা-খরচের খাতাটাই হবে ওর বউ। তা ওই খাতার মধ্যে জাদু আছে ভাই, ওই খাতার জোরেই তা এত বয়সে এমন সুন্দরী জুটল। এখন হজম করতে পারলে হয়। ওইখানে খাতার মন্তর খাটে না।
কুমুদিনী অবাক
বুঝেছি, তা পছন্দ না হলেই বা কী, সাত পাক যখন ঘুরেছ তখন একুশ পাক উল্টে ঘুরলেও ফাঁস খুলবে না।
কুমুদিনী। কী কথা বলছ দিদি!
শ্যামাসুন্দরী। খোলসা করে কথা বললেই কি দোষ হয় ভাই! মুখ দেখে বুঝতে পারি নে? তা, দোষ দেব না তোমাকে। ও আমাদের আপন বলেই কি চোখের মাথা খেয়ে বসেছি? কিন্তু বড়ো শক্ত হাতে পড়েছ বউ, বুঝেসুঝে চোলো।
মোতির মার প্রবেশ
ভয় নেই, বকুল ফুল, যাচ্ছি আমি। ভাবলুম তুমি নেই এই ফাঁকে নতুন বউয়ের সঙ্গে একটু আলাপ করে আসি গে। তা সত্যি বটে, এ কৃপণের ধন, সাবধানে রাখতে হবে। সইকে বলছিলুম আমাদের দেওরের এ যেন আধকপালে মাথা ধরা ; বউকে ধরেছে ওর বাঁ দিকের পাওয়ার কপালে, ডান দিকের রাখার কপালে যদি ধরতে পারে তবেই পুরোপুরি হবে।
ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে মুহূর্ত পরেই পুনঃপ্রবেশ