বিপ্রদাস। বৃথা সময় নষ্ট করছ। প্রজাপতির কাজ প্রজাপতিই সেরে নেবেন— আমি এর মধ্যে নেই।
ঘটক। আচ্ছা, তাড়া নেই, ভালো করে ভেবে দেখুন। আমি আসছে শুক্রবার এসে আর-একবার খবর নিয়ে যাব।
[ প্রস্থান
দেওয়ানজির প্রবেশ
বিপ্রদাস। একজন ঘটক এসেছিল।
দেওয়ানজি। এখানে আসবার আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছে।
বিপ্রদাস। আমি ওকে বিদায় করে দিয়েছি।
দেওয়ানজি। প্রস্তাবটা শুনেই আমার বুকটা লাফিয়ে উঠেছিল। ভাবলুম হঠাৎ বুঝি কূল পাওয়া গেল। কিন্তু বড়ো বেশি লোভ যখন হয় তখনি বড়ো বেশি ভুল করবার আশঙ্কা। তাই চুপ করে গেলুম, ভাবলুম, বড়োবাবু শুনে কী বলেন দেখা যাক।
বিপ্রদাস। নিজেদের উদ্ধার করবার লোভে কুমুকে ভাসিয়ে দিই যদি তা হলে কি আর বেঁচে সুখ থাকবে?
দেওয়ানজি। ওর মধ্যে ভয়ের কথা আছে। ঘটককে ফিরিয়ে দিলে পাত্রের সেটা কি সইবে? ওর হাতে যে আমাদের মারের অস্ত্র।
বিপ্রদাস। নিজের অন্তরের মারই সব চেয়ে বড়ো মার, সেই লোভের মারকেই সব দিয়ে ঠেকাতে হবে।
দেওয়ানজি। কথাটা নিছক লোভের কথা নয় তাও বলি। ওই মানুষটি একটা জাল তো জড়িয়েছে, সে ঋণের জাল, তার উপরে সম্বন্ধের ফাঁস যদি আঁট করে লাগায় তা হলে অন্তরে বাইরে প্রাণ নিয়ে টান পড়বে। এটা ওর কিস্তিমাতের শেষ চাল কি না সেও তো ভেবে পাচ্ছি নে।
কুমুর প্রবেশ
কুমুদিনী। দাদা, কেন তোমরা আমার জন্যে মিছে ভাবছ?
বিপ্রদাস। কী ভাবছি?
কুমুদিনী। আমি এই ঘরেই আসছিলুম— এমন সময়ে ঘরের বাইরে চটিজুতো আর ছাতা দেখে থেমে গেলুম। বারান্দা থেকে সব কথা আমি শুনিছি।
বিপ্রদাস। ভালোই হয়েছে। তা হলে জেনেছ আমি ঘটকের কথায় কান দিই নি।
কুমুদিনী। আমি কান দিয়েছি দাদা।
বিপ্রদাস। ভালোই তো। কান দেবার আর মত দেবার মতো বয়স তোর এল। এ প্রস্তাবে তোর কথাই শেষ কথা। বাবা যখন ছিলেন, তোর বয়স দশ, বিয়ে প্রায় ঠিক হয়েই গিয়েছিল। হয়ে গেলে তোর মতের অপেক্ষা থাকত না। আজ তো তা আর সম্ভব নয়। রাজা মধুসূদন ঘোষালের কথা আগেই নিশ্চয় শুনেছিস। বংশমর্যাদায় খাটো নন। কিন্তু বয়সে তোর সঙ্গে অনেক তফাত। আমি তো রাজি হতে পারলেম না। এখন তোরই মুখের একটা কথা পেলেই চুকিয়ে দিতে পারি। লজ্জা করিস নে কুমু।
কুমুদিনী। না, লজ্জা করব না। ইতস্তত করবারও সময় নেই। যাঁর কথা বলছ নিশ্চয়ই তাঁর সঙ্গে আমার
সম্বন্ধ স্থির হয়েই গেছে।
বিপ্রদাস। কেমন করে স্থির হল?