বিনোদবিহারী। দেখ্ নলিন, তুই আমাকে ত্যাগ কর্। দুধের সাধ আর ঘোলে মেটাস নে। তুইও একটা বিয়ে করে ফেল্—আর এই জগৎটাকে শখের মরুভূমি করে রাখিস নে।
চন্দ্রকান্ত। একদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলুম, নলিন, জীবনে আর কখনো ঘটকালি করব না—আজ তোর খাতিরে সে প্রতিজ্ঞা আমি এখনই ভঙ্গ করতে প্রস্তুত আছি।
নিমাই। এখনই?
চন্দ্রকান্ত। হাঁ এখনই। একবার কেবল বাড়ি থেকে চাদরটা বদলে আসতে হবে।
নিমাই। সেই কথাটা খুলে বলো। আর এ পর্যন্ত তোমার প্রতিজ্ঞা যে কী রকম রক্ষা করে এসেছ সে আর প্রকাশ করে কাজ নেই।
বিনোদবিহারী। নলিন, আমার গা ছুঁয়ে বল্ দেখি তুই বিয়ে করবি।
নলিনাক্ষ। তুমি যদি বল বিনু, তা হলে আমি নিশ্চয় করব। এ পর্যন্ত আমি তোমার কোন্ অনুরোধটা রাখি নি বলো।
বিনোদবিহারী। চন্দরদা, তবে আর কী! একটা খোঁজ করো। একটি সৎকায়স্থের মেয়ে। ওঁদের আবার একটু সুবিধে আছে—খাদ্যের সঙ্গে হজমিগুলিটুকু পান, রাজকন্যার সঙ্গে অর্ধেক রাজত্বের জোগাড় হয়।
চন্দ্রকান্ত। তা বেশ কথা। আমি এই সংসারসমুদ্রে দিব্যি একটি খেয়া জমিয়েছি—একে একে তোদের দুটিকে আইবুড়ো-কূল থেকে বিবাহ-কূলে পার করে দিয়েছি—মিস্টার চাটুজ্যেকেও একহাঁটু কাদার মধ্যে নাবিয়ে দিয়ে এসেছি, এখন আর কে কে যাত্রী আছে ডাক দাও—
বিনোদবিহারী। এখন এই অনাথ যুবকটিকে পার করে দাও।
নলিনাক্ষ। বিনু ভাই, আর কেউ নয়, কেবল তুমি যাকে পছন্দ করে দেবে, আমি তাকেই নেব। দেখেছি তোমার সঙ্গে আমার রুচির মিল হয়।
বিনোদবিহারী। তাই সই। তবে আমি সন্ধানে বেরোব। চন্দরদার আবার চাদর বদলাতে বড়ো বিলম্ব হয় দেখেছি। ততক্ষণ আমিই খেয়া দেব।
নিমাই। আজ তবে সভাভঙ্গ হোক। ও দিকে যতই রাত বয়ে যাচ্ছে আমাদের চন্দ্র ততই ম্লান হয়ে আসছেন।
চন্দ্রকান্ত। উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু আগে আমাদের ভাগ্যলক্ষ্মীদের একটি বন্দনা গেয়ে তার পরে বেরোনো যাবে। এটি বিরহকালে আমার নিজের রচনা—বিরহ না হলে গান বাঁধবার অবসর পাওয়া যায় না। মিলনের সময় মিলনটা নিয়েই কিছু ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকতে হয়।
গান। প্রথমে চন্দ্র পরে সকলে মিলিয়া
বাউলের সুর
যার অদৃষ্টে যেমনি জুটুক তোমরা সবাই ভালো!
আমাদের এই আঁধার ঘরে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালো।
কেউ বা অতি জ্বলজ্বল, কেউ বা ম্লান ছলছল,
কেউ বা কিছু দহন করে, কেউ বা স্নিগ্ধ আলো।