নিমাই। কী সর্বনাশ! এ-যে বাবা!
শিবচরণ। শুনছ? কালেজ কোন্ দিকে! তোমার অ্যানাটমির নোট কি ঐ দেয়ালের গায়ে লেখা আছে। তোমার সমস্ত ডাক্তারি শাস্ত্র কি ঐ জানলায় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে। (নিমাই নিরুত্তর) মুখে কথা নেই যে! লক্ষ্মীছাড়া, এই তোর একজামিন! এইখানে তোর মেডিকেল কালেজ!
নিমাই। খেয়েই কালেজে গেলে আমার অসুখ করে, তাই একটুখানি বেড়িয়ে নিয়ে—
শিবচরণ। বাগবাজারে তুমি হাওয়া খেতে এস? শহরের আর-কোথাও বিশুদ্ধ বায়ু নেই! এ তোমার দার্জিলিং সিমলে পাহাড়! বাগবাজারের হাওয়া খেয়ে খেয়ে আজকাল যে চেহারা বেরিয়েছে একবার আয়নাতে দেখা হয় কি। আমি বলি ছোঁড়াটা একজামিনের তাড়াতেই শুকিয়ে যাচ্ছে—তোমাকে যে ভূতে তাড়া করে বাগবাজারে ঘোরাচ্ছে তা তো জানতুম না!
নিমাই। আজকাল বেশি পড়তে হয় বলে রোজ খানিকটা করে একসেসাইজ করে নিই—
শিবচরণ। রাস্তার ধারে কাঠের পুতুলের মতো হাঁ করে দাঁড়িয়ে থেকে তোমার একসেসাইজ হয়,বাড়িতে তোমার দাঁড়াবার জায়গা নেই!
নিমাই। অনেকটা চলে এসে শ্রান্ত হয়েছিলুম তাই একটু বিশ্রাম করা যাচ্ছিল।
শিবচরণ। শ্রান্ত হয়েছিস, তবে ওঠ্ আমার পালকিতে। যা এখনি কালেজ যা। গেরস্তর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে শ্রান্তি দূর করতে হবে না!
নিমাই। সে কী কথা! আপনি কি করে যাবেন?
শিবচরণ। আমি যেমন করে হোক যাব, তুই এখন পালকিতে ওঠ্। ওঠ্ বলছি।
নিমাই। অনেকটা জিরিয়ে নিয়েছি—এখন আমি অনায়াসে হেঁটে যেতে পারব।
শিবচরণ। না, সে হবে না—তুই ওঠ্ আমি দেখে যাই—
নিমাই। আপনার যে ভারি কষ্ট হবে।
শিবচরণ। সেজন্যে তোকে কিছু ভাবতে হবে না—তুই ওঠ্ পালকিতে।
নিমাই। কী করি—পালকিতে ওঠা যাক, আজ সকালবেলাটা মাটি হল।
শিবচরণ। (বেহারার প্রতি) দেখ্, একেবারে সেই পটলডাঙার কালেজে নিয়ে যাবি, কোথাও থামাবি নে!
নিমাই। (জনান্তিকে বেহারাদের প্রতি) মির্জাপুর চন্দ্রবাবুর বাসায় চল্, তোদের এক টাকা বকশিশ দেব, ছুটে চল্।
শিবচরণ। আজ আর রুগি দেখা হল না। আমার সকালবেলাটা মাটি করে দিলে।