ক্ষান্তমণি। তোমরা ভাই নানা রকম বই পড়েছ, তোমরা বলতে পার কী করলে ভালো হয়।
ইন্দুমতী। তোমার স্বামী ঠাট্টা করে বলে, সে কি আর সত্যি।
ক্ষান্তমণি। না ভাই, ঠাট্টা কি সত্যি ঠিক বুঝতে পারি নে। আর, সত্যি হবারই বা আটক কী। আমার বাপ-মা আমাকে ঘরকন্না ছাড়া আর তো কিছুই শেখায় নি। এদানিং বাংলা বইগুলো সব পড়ে নিয়েছি, তাতে অনেক রকম কথাবার্তা আছে কিন্তু সেগুলো নিয়ে কোনো সুবিধে করতে পারছি নে। আমার স্বামী যে রকম চায় সে ভাই আমাকে কিছুতেই মানায় না।
ইন্দুমতী। তোমার স্বামীর আবার তেমনি সব বন্ধু জুটেছে, তারাই পাঁচজনে পাঁচ কথা কয়ে তাঁর মন উতলা করে দেয়। বিশেষ, সেদিন বিনোদবাবু আর তোমার স্বামীর সঙ্গে আর-একটি কে বাবু আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল, তাকে দেখে আমার আদবে ভালো লাগল না। লোকটি কে ভাই।
ক্ষান্তমণি। কী জানি ভাই। বন্ধু একটি-আধটি তো নয়, সবগুলোকে আবার চিনিও নে। ললিতবাবু হবে বুঝি।
ইন্দুমতী। (স্বগত) নিশ্চয় ললিতবাবু হবে। নাম শুনেই মনে হচ্ছে তাঁর নাম বটে।
ক্ষান্তমণি। কী রকম বলো দেখি। সুন্দর-হানো? পাতলা?
ইন্দুমতী। হাঁ—
ক্ষান্তমণি। চোখে চশমা আছে?
ইন্দুমতী। হাঁ হাঁ, চশমা আছে— আর সকল কথাতেই মুচকে মুচকে হাসে—দেখে গা জ্বলে যায়।
ক্ষান্তমণি। তবে আমাদের ললিত চাটুজ্জে তার আর সন্দেহ নেই।
ইন্দুমতী। ললিত চাটুজ্জে!
ক্ষান্তমণি। জান না? ঐ কলুটোলার নৃত্যকালী চাটুজ্জের ছেলে। ছোকরাটি কিন্তু মন্দ না ভাই। এম. এ. পাস করে জলপানি পাচ্ছে।
ইন্দুমতী। ওদের ঘরে স্ত্রীপুত্রপরিবার কেউ নেই নাকি! অমনতরো লক্ষ্মীছাড়ার মতো যেখানে-সেখানে টো টো করে ঘুরে বেড়ায় কেন।
ক্ষান্তমণি। স্ত্রীপুত্র থেকেই বা কী হয়। ওর তো তবু নেই। ললিত আবার বাপকে বলেছে রোজগার না করে সে বিয়ে করবে না। সে কথা যাক। এখন আমাকে একটা পরামর্শ দে না ভাই।
ইন্দুমতী। আচ্ছা, এক কাজ করা যাক। মনে করো আমি চন্দ্রবাবু; আপিস থেকে ফিরে এসেছি, খিদেয় প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে—তার পরে তুমি কী করবে বলো দেখি। রোসো ভাই, চন্দ্রবাবুর ঐ চাপকান আর শামলাটা পরে নিই, নইলে আমাকে চন্দ্রবাবু মনে হবে না।
(গম্ভীর ভাবে) ক্ষান্তমণি, স্বামীর প্রতি এরূপ পরিহাস অত্যন্ত গর্হিত কার্য। কোনো পতিব্রতা রমণী স্বামীর সমক্ষে কদাপি