নিবারণ। অতি উত্তম কথা। শুনে বড়ো সন্তোষ লাভ করলেম। পাত্রটি কে।
চন্দ্রকান্ত। আপনি বিনোদবিহারীবাবুর নাম শুনেছেন বোধ করি?
নিবারণ। বিলক্ষণ! তা আর শুনি নি! তিনি আমাদের দেশের এক জন প্রধান লেখক! “জ্ঞানরত্নাকর” তো তাঁরই লেখা!
চন্দ্রকান্ত। আজ্ঞে না। সে বৈকুণ্ঠ বসাক বলে একটি লোকের লেখা।
নিবারণ। তাই বটে। আমার ভুল হয়েছে। তবে “প্রবোধলহরী” তাঁর লেখা হবে। আমি ঐ দুটোতে বরাবর ভুল করে থাকি।
চন্দ্রকান্ত। আজ্ঞে না। “প্রবোধলহরী” তাঁর লেখা নয়—সেটা কার বলতে পারি নে। ও বইটার নাম পূর্বে কখনো শুনি নি।
নিবারণ। তবে তাঁর একখানা বইয়ের নাম করুন দেখি।
চন্দ্রকান্ত। “কাননকুসুমিকা” দেখেছেন কি।
নিবারণ। “কাননকুসুমিকা”! না, আমি দেখি নি। অবশ্য খুব ভাল বই হবে। নামটি অতি সুললিত। বাংলা বই বহুকাল পড়ি নি—সেই বাল্যকালে পড়তেম—তখন অবশ্যই “কাননকুসুমিকা” পড়ে থাকব কিন্তু স্মরণ হচ্ছে না। যাই হোক, বিনোদবাবুর পুত্রের কথা বলছেন বুঝি? তা তাঁর বয়স কত হল এবং কটি পাশ করেছেন?
চন্দ্রকান্ত। মশায় ভুল করছেন। বিনোদবাবুর বয়স অতি অল্প। তিনি এম.এ. পাশ করে বি. এল. পড়ছেন। তাঁর বিবাহ হয়নি। তাঁরই কথা মশায়কে বলছিলুম। তা আপনার কাছে প্রকাশ করে বলাই ভালো—এই এঁর নাম বিনোদবাবু।
নিবারণ। আপনি বিনোদবাবু! আজ আমার কী সৌভাগ্য! বাংলা দেশে আপনাকে কে না জানে! আপনার রচনা কে না পড়েছে। আপনারা হচ্ছেন ক্ষণজন্মা লোক—
বিনোদবিহারী। আজ্ঞে ও কথা বলে আর লজ্জা দেবেন না। বাংলা দেশে মতি হালদারের বই সকলে পড়ে বটে,আমার লেখা তো সকলের পড়বার মতন নয়।
নিবারণ। মতি হালদার? যাঁর পাঁচালি। হাঁ, তাঁর রচনার ক্ষমতা আছে বটে। তা আপনারও লেখা মন্দ হবে না। আমি মেয়েদের কাছে শুনেছি আপনি দিব্যি লিখতে পারেন। যা হোক আপনার বিনয়গুণে বড়ো মুগ্ধ হলেম।
চন্দ্রকান্ত। তা এঁর সঙ্গে আপনার ভাইঝির বিবাহ দিতে যদি আপত্তি না থাকে—
নিবারণ। আপত্তি? আমার পরম সৌভাগ্য!
চন্দ্রকান্ত। তা হলে এ সম্বন্ধে যা যা স্থির করবার আছে কাল এসে মশায়ের সঙ্গে কথা হবে।
নিবারণ। যে আজ্ঞে। কিন্তু একটা কথা বলে রাখি—মেয়েটির বাপ টাকাকড়ি কিছুই রেখে যেতে পারেন নি। তবে এই পর্যন্ত বলতে পারি এমন লক্ষী মেয়ে আর পাবেন না।
ইন্দুমতী। (অন্তরালে কমলমুখীকে টানিয়া আনিয়া) দিদি, ও দিদি, ঐ দেখ্ ভাই, তোর পরম সৌভাগ্য ঐ মাঝখানটিতে বসে রয়েছেন—মেঝের ভিতর থেকে কবিত্ব বেরোতে পারে কি না, তাই নিরীক্ষণ করে দেখছেন।
কমলমুখী। তুই যে বললি বোসেদের বাড়ির নতুন জামাই এসেছে, তাই তো আমি ছুটে দেখতে এলুম।
ইন্দুমতী। সত্যি কথাটা শুনলে আরো বেশি ছুটে আসতিস। যা দেখতে এসেছিলি তার চেয়ে ভালো জিনিষ দেখলি তো ভাই! আর পরের বাড়ির জামাই দেখে কী হবে, এখন নিজের সন্ধান দেখ্।
কমলমুখী। তোর আবশ্যক হয়ে থাকে তুই দেখ্। এখন আমার অন্য কাজ আছে।