শিবচরণ। আমার হাতে দুই-একটি পাত্র আছে, আমিও সন্ধান দেখছি।
নিবারণ। আর-একটি কথা তোমাকে বলা উচিত। আমার মেয়েটির কিছু বয়স হয়েছে।
শিবচরণ। আমিও তাই চাই। ঘরে যদি গিন্নি থাকতেন তা হলে বউমা ছোটো হলে ক্ষতি ছিল না—তিনি দেখিয়ে শুনিয়ে ঘরকন্না শিখিয়ে ক্রমে তাকে মানুষ করে তুলতেন। এখন এই বুড়োটাকে দেখে-শোনে আর ছেলেটাকে বেশ শাসনে রাখতে পারে এমন একটি মেয়ে না হলে সংসারটি গেল। ছেলেটা কালেজে যায়, আমি তো শহরের নাড়ি টিপে ঘুরে বেড়াই, বাড়িতে কেউ নেই—ঘরে ফিরে এলে মনে হয় না ঘরে এলুম—মনে হয় যেন বাসা ভাড়া করে আছি।
নিবারণ। তা হলে তোমার একটি অভিভাবকের নিতান্ত দরকার দেখছি।
শিবচরণ। হাঁ, ভাই, মা ইন্দুকে বোলো, আমার নিমাইয়ের ঘরে এলে এই বুড়ো নাবালকটিকে প্রতিপালনের ভার তাঁকেই নিতে হবে। তখন দেখব তিনি কেমন মা।
নিবারণ। তা ইন্দুর সে অভ্যেস আছে। বহুকাল একটি আস্ত বুড়ো বাপ তারই হাতে পড়েছে। দেখতেই তো পাচ্ছ, ভাই, খাইয়ে-দাইয়ে বেশ একরকম ভালো অবস্থাতেই রেখেছে।
শিবচরণ। তাই তো। তাঁর হাতের কাজটিকে দেখে তারিফ করতে হয়। তাই বটে, তোমার এখনো আধ-মাথা কাঁচাচুল দেখা যাচ্ছে—হায় হায়, আমার মাথাটা কেবল অযত্নেই আগাগোড়া পেকে গেল— নইলে,বয়েস এমনিই কী বেশি হয়েছে। যা হোক আজ তবে আসি। গুটিদুয়েক রুগি এখনো মরতে বাকি আছে।
ইন্দুমতী। ও বুড়োটা কে এসেছিল বাবা?
নিবারণ। কেন মা বুড়ো বুড়ো করছিস—তোর বাবাও তো বুড়ো।
ইন্দুমতী। (নিবারণের পাকা চুলের মধ্যে হাত বুলাইয়া) তুমি তো আমাদের আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো, তোমার সঙ্গে কার তুলনা। কিন্তু ওটা কে। ওকে তো কখনো দেখি নি।
নিবারণ। ওর সঙ্গে ক্রমে খুবই পরিচয় হবে—
ইন্দুমতী। আমি খুব পরিচয় করতে চাই নে।
নিবারণ। তোর তো এ বাবা ক্রমে পুরোনো ঝরঝরে হয়ে এসেছে, এখন একবার বাবা বদল করে দেখবি নে ইন্দু?
ইন্দুমতী। তবে আমি চললুম।
নিবারণ। না না, শোন্-না। তুই তো তোর বাবার মা হয়ে উঠেছিস—এখন একটা কথা বলি, একটু ভালো করে বুঝে দেখ্ দেখি। তোরই যেন বাবার দরকার নেই, আমার তো একটি বাপের পদ খালি আছে—তাই আমি একটি সন্ধান করে বের করেছি মা—এখন আমার নতুন বাপের হাতে আমার পুরোনো মা-টিকে সমর্পণ করে আমার কর্তব্য কর্ম শেষ করে যাই।
ইন্দুমতী। তুমি কী বকছ আমি বুঝতে পারছি নে।
নিবারণ। নাঃ, তুমি আমার তেমনি হাবা মেয়ে কি না। সব বুঝতে পেরেছিস, কেবল দুষ্টুমি! তবে বলি শোন্—যে বুড়োটি এসেছিল ও আমার ছেলেবেলাকার বন্ধু, কালেজ ছাড়ার পর থেকে ওর সঙ্গে আমার এই প্রথম সাক্ষাৎ। ওর নিমাই বলে একটি ছেলে