চন্দ্রকান্ত। আচ্ছা, আমি বলব? রঙটি দুধে-আলতায়; সর্বদা প্রফুল্ল; অন্যের ঠাট্টায় খুব হাসে কিন্তু নিজে ঠাট্টা করতে পারে না; সরল অথচ বুদ্ধির অভাব নেই—একটু সামান্য আঘাতে মুখখানি ম্লান হয়ে আসে— যেমন অল্প উচ্ছ্বাসেই গান গেয়ে ওঠে তেমনি অল্প বাধাতেই গান বন্ধ হয়ে যায়—ঠিক যাকে চঞ্চল বলে তা নয় কিন্তু বেশ একটি যেন হিল্লোল আছে।
নিমাই। তুমি তোমার প্রতিবেশিনীকে আগে থাকতেই দেখ নি তো?
চন্দ্রকান্ত। মাইরি বলছি, না। আমার কি আর আশেপাশে দেখবার জো আছে। আমার এ দুটি চক্ষুই একেবারে দস্তখতি-সীলমোহর করা, অন হার ম্যাজেষ্টিস্ সর্ভিস! তবে শুনেছি বটে দেখতে ভালো এবং স্বভাবটিও ভালো।
নিমাই। আচ্ছা, এখন তা হলে আমরা কেউ দেখব না; একেবারে সেই বিবাহের রাত্রে মিলিয়ে দেখা যাবে।
চন্দ্রকান্ত। এ কিন্তু বড়ো মজা হচ্ছে ভাই—আমার লাগছে বেশ। সত্যি সত্যি একটা গুরতর যে কিছু হচ্ছে তা মনেই হচ্ছে না। বাস্তবিক, বিনোদের যদি বিয়ে করতে হয় তো এইরকম বিয়েই ভালো। নইলে, ও যে গম্ভীরভাবে রীতিমত প্রণালীতে ঘটকালি দিয়ে দরদাম ঠিক করে একটি ছিঁচকাঁদুনে দুধের মেয়ে বিয়ে করে এনে মানুষ করতে বসবে, সে কিছুতেই মনে করতে পারি নে।
তোমরা একটু বোসো ভাই, আমি অমনি বাড়ির ভিতর থেকে চট করে চাদরটা পরে আসি।
চন্দ্রকান্ত। বড়োবউ, ও বড়োবউ। চাবিটা দাও দেখি।
ক্ষান্তমণি। কেন জীবনসর্বস্ব নয়নমণি, দাসীকে কেন মনে পড়ল।
চন্দ্রকান্ত। ও আবার কী।
ক্ষান্তমণি। নাথ, একটু বসো, তোমার ঐ মুখচন্দ্রমা বসে বসে একটু নিরীক্ষণ করি—
চন্দ্রকান্ত। ব্যাপারটা কী। যাত্রার দল খুলবে নাকি। আপাতত একটা সাফ দেখে চাদর বের করে দাও দেখি, এখনি বেরোতে হবে—
ক্ষান্তমণি। (অগ্রসর হইয়া) আদর চাই! প্রিয়তম! তা আদর করছি!
চন্দ্রকান্ত। (পশ্চাতে হঠিয়া) আরে ছি ছি ছি! ও কী ও!
ক্ষান্তমণি। নাথ, বেলফুলের মালা গেঁথে রেখেছি, এখন কেবল চাঁদ উঠলেই হয় —কিন্তু সেই শোলোকটি লিখে দিয়ে যাও, আমি ততক্ষণ মুখস্থ করে রাখি—
চন্দ্রকান্ত। ওঃ! গুণবর্ণনা আড়াল থেকে সমস্ত শোনা হয়েছে দেখছি। বড়োবউ, কাজটা ভাল হয় নি। ওটা বিধাতার অভিপ্রায় নয়—তিনি মানুষের শ্রবণশক্তির একটা সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন—তার কারণই হচ্ছে, পাছে অসাক্ষাতে যে কথাগুলো হয় তাও মানুষ শুনতে পায়; তা হলে পৃথিবীতে বন্ধুত্ব বল, আত্মীয়তা বল, কিছুই টিঁকতে পারে না।