ইন্দ্রকুমার। খাঁ সাহেব, শত্রুসৈন্য হঠাৎ যুদ্ধ থামিয়ে দিলে কেন তার কোনো খবর পেয়েছ?
ইশা খাঁ। পেয়েছি বৈকি। রাজধর আরাকান-রাজকে বন্দী করেছে।
ইন্দ্রকুমার। রাজধর! মিথ্যা কথা!
ইশা খাঁ। যা মিথ্যা হওয়া উচিত ছিল এক-এক সময় তাও সত্য হয়ে ওঠে। আমি দেখতে পাচ্ছি আল্লার দূতেরা এক-এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে, শয়তান তখন সমস্ত হিসাব উলটা করে দিয়ে যায়।
ইন্দ্রকুমার। শয়তানও কি রাজধরকে জিতিয়ে দিতে পারে!
ইশা খাঁ। একবার তো জিতিয়েছিল সেই অস্ত্রপরীক্ষার সময়—এবারও সেই শয়তান জিতিয়েছে।
যুবরাজ। সেনাপতি সাহেব, তুমি রাজধরের উপর রাগ কোরো না। সে যদি জিতে থাকে তাতে তো আমাদেরই জিত। কখন সে যুদ্ধ করলে, কখন বা বন্দী করলে, আমরা তো জানতে পারি নি।
ইশা খাঁ। কাল সন্ধ্যার পরে আমরা যখন যুদ্ধে ক্ষান্ত দিয়ে শিবিরে ফিরে এলেম তখন সে অন্ধকারে গোপনে নদী পার হয়ে হঠাৎ আরাকান-রাজের শিবির আক্রমণ করে তাঁকে বন্দী করেছে। আমাদের সাহায্য করবার জন্যে আমি তাকে যেখানে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলুম সেখানে সে ছিলই না। আমি সেনাপতি, আমার আদেশ সে মান্যই করে নি।
ইন্দ্রকুমার। অসহ্য! এজন্যে তার শাস্তি পাওয়া উচিত।
ইশা খাঁ। শুধু তাই! যুবরাজ উপস্থিত থাকতে সে কিনা নিজের ইচ্ছামত সন্ধিপত্র রচনা করেছে!
ইন্দ্রকুমার। এর শাস্তি না দিলে অন্যায় হবে।
ইশা খাঁ। তোমার দাদাকে এই সহজ কথাটি বুঝিয়ে দাও দেখি।
ইন্দ্রকুমার। রাজধর! তুমি কাপুরুষতা প্রকাশ করেছ।
রাজধর। তোমার মতো যুদ্ধে ভঙ্গ দিয়ে পুরুষকার প্রকাশ করতে আমি এত দূরে আসি নি—আমি যুদ্ধ জয় করতে এসেছিলুম।
ইন্দ্রকুমার। তুমি যুদ্ধ করেছ? এবং জয় করেছ! জয়লক্ষ্মীর মুখ যে লজ্জায় লাল করে তুলেছ!
রাজধর। তা হতে পারে, সেটা প্রণয়ের লজ্জা। কিন্তু তিনি যে আমাকে বরণ করেছেন তার সাক্ষ্মী এই।
ইন্দ্রকুমার। এ মুকুট কার?
রাজধর। এ মুকুট আমার। এ আমার জয়ের পুরস্কার।
ইন্দ্রকুমার। যুদ্ধ থেকে পালিয়েছ তুমি, তুমি পুরস্কার পাবে কিসের! এ মুকুট যুবরাজ পরবেন।
রাজধর। আমি জিতে এনেছি, আমিই পরব।
যুবরাজ। রাজধর ঠিক কথাই বলছেন। ওঁর জয়ের ধন তো উনিই পরবেন।
ইশা খাঁ। সেনাপতির আদেশ লঙ্ঘন করে উনি অন্ধকারে শৃগালবৃত্তি অবলম্বন করলেন—আর, উনি পরবেন মুকুট! ভাঙা হাঁড়ির কানা পরে যদি দেশে যান তবেই ওঁকে সাজবে।
রাজধর। আমি যদি না থাকতুম ভাঙা হাঁড়ির কানা তোমাদের পরতে হত। এতক্ষণ থাকতে কোথায়?