মহারাজ। তবে ইশা খাঁ, তুমি সৈন্যাধ্যক্ষ হয়ে এঁদের সকলকে শত্রুবিজয়ে নিয়ে যাও। ত্রিপুরেশ্বরী তোমাদের সহায় হোন।
ধুরন্ধর। তুমি পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়ে তফাতে থাকবে না কি?
রাজধর। হাঁ—ইশা খাঁর কাছে আমি এই প্রস্তাব পাঠিয়েছিলুম।
ধুরন্ধর। সে তো আমি জানি; আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলুম। তাই নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়ে গেল।
রাজধর। কিরকম?
ধুরন্ধর। প্রথমেই তো ইন্দ্রকুমার অট্টাহাস্য করে উঠলেন। তিনি বললেন, রাজধরের যুদ্ধপ্রণালীটাই ঐরকম, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহু দূরে থেকেই তিনি যুদ্ধ করতে ভালোবাসেন।
রাজধর। সে কথা ঠিক। ক্ষেত্র হতে যুদ্ধ করে মজুররা, দূরে থেকে যে যুদ্ধ করতে পারে সেই যোদ্ধা। ইশা খাঁ কী বললেন?
ধুরন্ধর। তোমার উপর তাঁর বিশ্বাস কিরকম সে তো তুমি জানই। তুমি যদি পায়ে ধরতে যাও তা হলেও তিনি সন্দেহ করেন নিশ্চয় জুতোজোড়াটা তোমার সরাবার মতলব আছে। তাই, ইশা খাঁ বললেন, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রাজধর তফাতে থাকতে চান সেটা তাঁর পক্ষে আশ্চর্য নয়, কিন্তু পাঁচ হাজার সৈন্য সঙ্গে রাখতে চান সেইটে আমার ভালো ঠেকছে না।
রাজধর। যুবরাজ কিছু বললেন না?
ধুরন্ধর। যুবরাজ কাউকে যে সন্দেহ করবেন সে পরিমাণ বুদ্ধি ভগবান তাঁকে দেন নি—এমন-কি, তুমি যে তুমি, তোমার উপরেও তাঁর সন্দেহ হয় না।
রাজধর। দেখো ধুরন্ধর, দাদার কথা তুমি অমন করে বোলো না।
ধুরন্ধর। ওঃ, ঐ জায়গাটা তোমার একটু নরম আছে সেটা মাঝে মাঝে ভুলে যাই। যা হোক, তিনি বললেন, না, না, রাজধরের প্রতি তোমরা অন্যায় অবিচার করছ। তাঁর প্রস্তাবটা তো আমার ভালোই ঠেকছে। যুদ্ধে যদি সংকট উপস্থিত হয় তা হলে তিনি তাঁর সৈন্য নিয়ে আমাদের সাহায্য করতে পারবেন। যুবরাজের অনুরোধেই তো ইশা খাঁ তোমার প্রস্তাবে রাজি হলেন, নইলে তাঁর বড়ো ইচ্ছে ছিল না। যাই হোক, কিন্তু আমি তোমার আলাদা থাকবার মতলব ভালো বুঝতে পারছি নে।
রাজধর। ওঁদের সঙ্গে একত্রে মিলে যুদ্ধ করে আমার লাভ কী? জিত হলে সে জিতকে কেউ আমার জিত বলবে না তো।
ধুরন্ধর। তবু ভুলেও কেউ তোমার নাম করতে পারে, কিন্তু তফাতে বসে থাকলে যুদ্ধে জয় হলেও তোমার অপযশ, হারলে তো কথাই নেই।
রাজধর। আমার এই পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়েই আমি যুদ্ধে জিতব এবং আমি একলাই জিতব।