ইশা খাঁ। তা হলে তুমি হার মানছ?
ইন্দ্রকুমার। হাঁ, আমি হার মানছি।
ইশা খাঁ। শাবাশ বাবা, শাবাশ! তুমি রাজার ছেলে বটে। মহারাজ, কোথাও একটা-কিছু অন্যায় হয়ে গেছে, সে কথাটা প্রকাশ হচ্ছে না। আর-একবার পরীক্ষা না হলে ঠিকমত মীমাংসা হতে পারবে না।
রাজধর। খাঁ সাহেব, অন্যায় আর কিছু নয়, আমার জেতাই অন্যায় হয়েছে। কিন্তু তাই বলে আবার পরীক্ষার অপমান আমি স্বীকার করতে পারব না। আমার জিত হওয়া যদি অন্যায় হয়ে থাকে সে অন্যায়ের সহজ প্রতিকার আছে। আমি পুরস্কার চাই নে, মধ্যম কুমারকেই পুরস্কার দেওয়া হোক।
মহারাজ। সে কথা আমি বলতে পারি নে—তীরে যখন তোমার নাম লেখা আছে তখন তোমাকে পুরস্কার দিতেই আমি বাধ্য। এই তুমি নাও।
রাজধর। পুরস্কার আমি শিরোধার্য করে নিচ্ছি, কিন্তু আমার এই সৌভাগ্যে কারও মন যখন প্রসন্ন হচ্ছে না তখন এই তলোয়ার আমি দাদা ইন্দ্রকুমারকেই দিলুম।
ইন্দ্রকুমার। (তলোয়ার মাটিতে নিক্ষেপ করিয়া) ধিক্! তোমার হাত থেকে এ পুরস্কারের অপমান গ্রহণ করবে কে?
ইশা খাঁ। (ইন্দ্রকুমারের হাত ধরিয়া) কী? ইন্দ্রকুমার, মহারাজের দত্ত তলোয়ার তুমি মাটিতে ফেলে দিতে সাহস কর! তোমার এই অপরাধের সমুচিত শাস্তি হওয়া চাই।
ইন্দ্রকুমার। (হাত ছাড়াইয়া লইয়া) বৃদ্ধ, আমাকে স্পর্শ কোরো না।
ইশা খাঁ। পুত্র, একি পুত্র! তুমি আজ আত্মবিস্মৃত হয়েছ।
ইন্দ্রকুমার। সেনাপতি সাহেব, আমাকে ক্ষমা করো। আমি যথার্থই আত্মবিস্মৃত হয়েছি। আমাকে শাস্তি দাও।
যুবরাজ। ক্ষান্ত হও ভাই, ঘরে ফিরে চলো।
ইন্দ্রকুমার। (মহারাজের পদধূলি লইয়া) পিতা, অপরাধ মার্জনা করুন। আজ সকল রকমেই আমার হার হয়েছে।
ইশা খাঁ। মহারাজ, আমার একটি নিবেদন আছে। খেলার পরীক্ষা তো চুকেছে, এবার কাজের পরীক্ষা হোক। দেখা যাবে তাতে আপনার কোন্ পুত্র পুরস্কার আনতে পারে।
মহারাজ। কোন্ কাজের কথা বলছ সেনাপতি।
ইশা খাঁ। আরাকান-রাজের সঙ্গে মহারাজের যুদ্ধের মতলব আছে। সৈন্যও তো প্রস্তুত হয়েছে। এইবার কুমারদের সেই যুদ্ধে পাঠানো হোক।
মহারাজ। ভালো কথাই বলেছ সেনাপতি। খবর পেয়েছি আরাকানের রাজা চট্টাগ্রামের সীমানার কাছে এসেছেন। বার বার শিক্ষা দিয়েছি, কিন্তু মূর্খের শিক্ষার শেষ তো কিছুতেই হয় না, যমরাজের পাঠশালায় না পাঠালে গতি নেই। কী বল বৎসগণ! আমাদের সেই চিরশত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ে যাত্রা করে ক্ষাত্রচর্যে দীক্ষা গ্রহণ করতে রাজি আছ কি?
ইন্দ্রকুমার। রাজি। দাদাও যাবেন।
রাজধর। আমিও যাব না মনে করছ না কি?