লীলা। নিশ্চয় বলব, গল্পের বিষয়টা কী বল্ দেখি।
বাঁশরি। হিরোর নাম স্যার চন্দ্রশেখর। নায়িকা পঙ্কজা, ধনকুবেরের মন ভোলাতে লেগেছেন উঠে পড়ে। ওঠার চেয়ে পড়ার অংশটাই বেশি। সেণ্ট্-অ্যাণ্টনির টেম্টেশন ছবি দেখেছিস তো? দিনের পর দিন নূতন বেহায়াগিরি–তোর খুব-যে শুচিবাই তা নয়, তবু ক্ষণে ক্ষণে গঙ্গার ঘাটে দৌড় মারতে চাইতিস। দ্বিতীয় নম্বরের নায়িকা গলা ভেঙে মরছে পঙ্ককুণ্ডের ধারে দাঁড়িয়ে। অবশেষে একদিন পৌষ মাসের অর্ধরাতে খিড়কির ঘাটে–তুই ভাবছিস হতভাগিনী আত্মহত্যা করে বাঁচল–ক্ষিতিশের কল্পনাকে অবিচার করিস নে–নায়িকা জলের মধ্যে এক পৈঁঠে পর্যন্ত নেবেছিল। ঠাণ্ডা জলে ছ্যাঁক করে উঠল গা-টা। ছুটল গরম বিছানা লক্ষ্য করে। এইখানটাতে সাইকলজির তর্ক এই, শীত করল বলেই মরা মুলতুবি কিংবা শীত করাতে আগুনের কথাটা মাথায় এল, অমনি ভাবল ওদের জ্বালিয়ে মারবে বেঁচে থেকে।
লীলা। কিছুতে বুঝতে পারি নে, এত লোক থাকতে ক্ষিতীশের উপর এত ভরসা রেখেছিস কী করে।
বাঁশরি। অবিচার করিস নে। ওর লেখবার শক্তি আছে। ও আমাদের ময়মনসিংহের বাগানের আম, জাত ভালো, কিন্তু যতই চেষ্টা করা গেল ভিতরে পোকা হতেই আছে। ঐ পোকা বাদ দিয়ে কাজে লাগানো হয়তো চলবে। ঐ বুঝি আসছে।
লীলা। আমি তবে চললুম।
বাঁশরি। একেবারে যাস নে। সন্ধেবেলাটা কোনোমতে কাটাতে হবে। কমিক গল্পটা তো শেষ হল।
লীলা। কমিক গল্পের এক্টিনি করতে হবে বুঝি আমাকেই? আচ্ছা, রইলুম পাশের ঘরে।
ক্ষিতিশ। কেমন লাগল। মেলোড্রামার খাদ মেশাই নি সিকি তোলাও। সেণ্টিমেণ্টালিটির তরল রস চায় যে-সব খুকিরা, তাদের পক্ষে নির্জলা একাদশী। একেবারে নিষ্ঠুর সত্য।
বাঁশরি। কেমন লাগল বুঝিয়ে দিচ্ছি (পাতাগুলি ছিঁড়ে ফেলল)।
ক্ষিতিশ। করলে কী। সর্বনাশ! এটা আমার সব লেখার সেরা, নষ্ট করে ফেললে?
বাঁশরি। দলিলটা নষ্ট করে ফেললেই সেরা জিনিসের বালাই থাকে না। কৃতজ্ঞ হোয়ো আমার ’পরে।
ক্ষিতিশ। সাহিত্যে নিজে কিছু দেবার শক্তি নেই, অথচ সংকোচ নেই তাকে বঞ্চিত করতে। এর দাম দিতে হবে, কিছুতে ছাড়ব না।
বাঁশরি। কী দাম চাই।
ক্ষিতিশ। তোমাকে।
বাঁশরি। ক্ষতিপূরণ এত সস্তায়, সাহস আছে নিতে?
ক্ষিতিশ। আছে।
বাঁশরি। সেণ্টিমেণ্ট্ এক ফোঁটাও মিলবে না।
ক্ষিতিশ। আশাও করি নে।
বাঁশরি। নির্জলা একাদশী, নিষ্ঠুর সত্য।
ক্ষিতিশ। রাজি আছি।