সোমশংকর। ওরে ভোলা, সেই নতুন গানটা-
ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো।
একলা রাতের অন্ধকারে আমি চাই পথের আলো।
দুন্দুভিতে হল রে কার আঘাত শুরু,
বুকের মধ্যে উঠল বেজে গুরু গুরু,
পালায় ছুটে সুপ্তিরাতের স্বপ্নে-দেখা মন্দ ভালো।
নিরুদ্দেশের পথিক, আমায় ডাক দিলে কি –
দেখতে তোমায় না যদি পাই নাই-বা দেখি।
ভিতর থেকে ঘুচিয়ে দিলে চাওয়া পাওয়া,
ভাবনাতে মোর লাগিয়ে দিলে ঝড়ের হাওয়া,
বজ্রশিখায় এক পলকে মিলিয়ে দিলে সাদা কালো॥
নেপথ্য থেকে। যেতে পারি কি?
সোমশংকর। এসো এসো।
তারক। রাজাবাহাদুর, আজকাল তোমার কাছে আসতে কিরকম ভয়-ভয় করে।
সোমশংকর। কোনো কারণ তো দেখি নে।
তারক। কারণ নেই বলেই তো ভয় বেশি। আজ বাদে কাল বিয়ে কিন্তু মনে হচ্ছে যেন দ্বীপান্তরে চলেছ। ভয়ানক গাম্ভীর্য।
সোমশংকর। বিয়েটা তো এক লোক থেকে অন্য লোকে যাত্রাই বটে।
তারক। সব বিয়ে তা নয় রাজন্! নিজের কথা বলতে পারি। আমার বরযাত্রা হয়েছিল পটলডাঙা থেকে চোরবাগানে। মনের ভিতরটাও তার বেশি এগোয় নি। আমার স্ত্রীর নাম পুষ্প। রসিকবন্ধু তার কবিতায় আমাকে খেতাব দিলে পুষ্পচোর। কবিতাটার হেডিং ছিল চৌর-পঞ্চাশিকা। কবিকে প্রশ্ন করলেম, চৌর-পঞ্চাশিকার একটা কবিতাই তো দেখছি, বাকী উনপঞ্চাশটা গেল কোথায়। উত্তর পেলেম, তারা উনপঞ্চাশ পবনরূপে বরের হৃদয়গহ্বরে বেড়াচ্ছে ঘুরপাক দিয়ে।
সোমশংকর। এর থেকে প্রমাণ হয় আমার রসিকবন্ধু নেই, তাই গাম্ভীর্য রয়েছে ঘনিয়ে।
তারক। আমাদের পাড়ার লক্ষ্মীছাড়ার দল অশোক গুপ্তদেব বাগানে দর্মা-ঘেরা একটা পোড়ো ফর্নরিতে ক্লাব করেছে। আপিস থেকে ফিরে এসে সেইখানে সন্ধেবেলায় বিষম হল্লা করতে থাকে। সান্ত্বনা দেবার জন্যে আমরা লক্ষ্মীমন্তরা ওদের নিমন্ত্রণ করছি। তোমাকে প্রিজাইড করতে হবে।
সোমশংকর। শুনেছি বৈকুণ্ঠলুণ্ঠন পাঁচালি লিখে ওরা আমাকে লক্ষ্মীহারী দৈত্য বানিয়েছে।