পূব দিকের জানলা খোলা। দেখা যায় নীচের বাগানে অর্কিডের ঘর, ছিটেবেড়ার তৈরি। বেড়ার গায়ে গায়ে অপরাজিতার লতা।
নীরজা। রোশনি!
আয়া এল ঘরে। প্রৌঢ়া, কাঁচা-পাকা চুল। শক্ত হাতে মোটা পিতলের কঙ্কণ। ঘাঘরার উপর শাড়ি। মাংসবিরল দেহের ভঙ্গিতে ও শুষ্ক মুখের ভাবে একটা চিরস্থায়ী কঠিনতা।
রোশনি। জল এনে দেব খোঁখী?
নীরজা। না বোস্।
আজ ভোরবেলায় দরজা খোলার শব্দ শুনলুম। সরলাকে নিয়ে বুঝি উনি বাগানে গিয়েছিলেন?..আমাকেও তো এমনি করে ভোরে জাগিয়ে বাগানের কাজে রোজ নিয়ে যেতেন, ঠিক ঐ সময়েই। সে তো বেশি দিনের কথা নয়।
রোশনি। এতগুলো মালী মাইনে খাচ্ছে তবু ওঁকে নইলে বাগান শুকিয়ে যেত বুঝি?
নীরজা। নিয়ুমার্কেটে ভোরবেলাকার ফুলের চালান না পাঠিয়ে আমার একদিনও কাটত না। আজও ফুলের চালান গিয়েছিল। গাড়ির শব্দ শুনেছি। আজকাল চালান কে দেখে দেয় রোশনি?
আর যাই হোক, আমি যতদিন ছিলুম মালীরা ফাঁকি দিতে পারে নি।
রোশনি। আর সেদিন নেই। লুঠ চলছে এখন দু-হাতে।
নীরজা। সত্যি নাকি?
রোশনি। আমি কি মিথ্যে বলছি? কলকাতার নতুন বাজারে ক-টা ফুলই বা পৌঁছয়? জামাইবাবু বেরিয়ে গেলেই খিড়কির দরজায় ফুলের বাজার বসে যায়।
নীরজা। এরা কেউ দেখে না?
রোশনি। চোখ থাকতেও যদি না দেখে তো কী আর বলব?
নীরজা। জামাইবাবুকে বলিস-নে কেন?
রোশনি। বলব! এত বড়ো বুকের পাটা কার! এখন কি আর সে রাজত্তি আছে? মান বাঁচিয়ে চলতে হয়। তুমি একটু জোর করে বলো-না কেন খোঁখী! তোমারি তো সব!