তিনকড়ি। আঃ, বাঁচলেম। তা হলে ছুটি—আমি যেতে পারি?
বৈকুণ্ঠ। কোথায় যাবে বাপু?
তিনকড়ি। অলক্ষ্মী যেখানে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ান। ভেবেছিলুম মেয়াদ ফুরোয় নি, খাতা এখনো অনেকখানি বাকি আছে, শুনে যেতে হবে। তা হলে প্রণাম হই।
বৈকুণ্ঠ। এসো বাবা, ঈশ্বর তোমার ভালো করুন।
তিনকড়ি। উঁহু! একটা কী গোল হয়েছে! ঠিক বুঝতে পারছি নে। ভাই ঈশেন, এতদিন পরে দেখা, তুমিও তো আমাকে মার্ মার্ শব্দে খেদিয়ে এলে না—তোমার জন্যে ভাবনা হচ্ছে।
অবিনাশ। দাদা, কোথা থেকে তুমি যত-সব লোক জুটিয়েছ— বাড়ির মধ্যে, বাইরে, কোথাও তো আর টিঁকতে দিলে না।
বৈকুণ্ঠ। তারা কি আমার লোক অবু। তোমারই তো সব—
অবিনাশ। আমার কে! আমি তাদের চিনি নে। কেদারের সব আত্মীয়, তুমিই তো তাদের স্থান দিয়েছ। সেইজন্যেই তো আমি তাদের কিছু বলতে পারি নে। তা, তুমি যদি পার তো তাদের সামলাও দাদা, আমি বাড়ি ছেড়ে চললুম।
বৈকুণ্ঠ। আমিই তো যাব মনে করছিলুম—
তিনকড়ি। তার চেয়ে তাঁরা গেলেই তো ভালো হয়। আপনারা দু-জনেই গেলে তাঁদের আদর-অভ্যর্থনা করবে কে?
অবিনাশ। বাড়ির মধ্যে একটা কে বুড়ি এসেছে, সে তো ঝগড়া করে একটাও দাসী টিঁকতে দিলে না—তাও সয়েছিলুম—কিন্তু আজ আমি স্বচক্ষে দেখলুম, সে নীরুর গায়ে হাত তুললে! আর সহ্য হল না, তাকে এইমাত্র গঙ্গাপার করে দিয়ে আসছি।
ঈশান। বেঁচে থাকো ছোটোবাবু, বেঁচে থাকো।
বৈকুণ্ঠ। অবিনাশ, তিনি ছোটবউমার আত্মীয়া হন, তাঁকে—
তিনকড়ি। কেউ না, কেউ না, ও বুড়ি কেদারদার পিসি। ওকে বিবাহ করে কেদারের পিসে আর বাঁচতে পারলে না, বিধবা হয়ে ভাইয়ের বাড়ি আসতে ভাইও মরে বাঁচল, এখন কেদারদা নিজের প্রাণ রক্ষে করতে ওকে তোমাদের এখানে চালান করেছে।
অবিনাশ। দাদা, তোমার এই বইগুলো মাটিতে নাবাচ্ছ কেন? তোমার ডেক্সো গেল কোথায়?
ঈশান। এ ঘরে যে বাবুটি থাকেন বই থাকলে তাঁর থাকবার অসুবিধে হয়, বড়োবাবুকে তিনি লুটিস দিয়েছেন!
অবিনাশ। কী! দাদাকে ঘর ছেড়ে যেতে হবে!
বিপিন। ‘ভাবতে পারি নে পরের ভাবনা’—
অবিনাশ। (তাড়া করিয়া গিয়া) বেরোও, বেরোও, বেরোও বলছি, বেরোও এখান থেকে—বেরোও এখনই—
বৈকুণ্ঠ। আহা, থামো অবু, থামো থামো, কী কর—বেণীবাবুকে—
বিপিন। বিপিনবাবুকে—
বৈকুণ্ঠ। হাঁ, বিপিনবাবুকে অপমান কোরো না—
তিনকড়ি। কেদারদাকে ডেকে আনতে হচ্ছে। এ তামাশা দেখা উচিত।