পুষ্প। ঝুলিতে যদি ছাই ভরবারই দরকার থাকে, কাঠের ছাই আছে, কয়লার ছাই আছে, সোনার ছাই দিয়ে বোকামি কর কেন।
ফকির। হায় রে, এইটেই বুঝলে না! গুরুজি বলেছেন, মহাদেবের তৃতীয় নেত্রে দগ্ধ হয়েছিলেন কন্দর্প, সোনার আসক্তি ছাই করতেই গুরুজির আবির্ভাব ধরাধামে। স্থূল সোনার কামনা ভস্ম করে কানে দেবেন সূক্ষ্ম সোনা, গুরুমন্ত্র।
পুষ্প। আর সহ্য হচ্ছে না, চল্ ভাই হৈমি, তোর পড়া বাকি আছে।
ফকির। সোহং ব্রহ্ম, সোহং ব্রহ্ম, সোহং ব্রহ্ম।
পুষ্প। (খানিক দূরে গিয়ে ফিরে এসে) রোসো ভাই, একটা কথা আছে, বলে যাই। ফকিরদা, শুনেছি তোমার গুরু আমার সঙ্গে একবার দেখা করবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
ফকির। হাঁ, তিনি শুনেছেন, তুমি বেদান্ত পাস করেছ। তিনি আমাকে বলে রেখেছেন, নিশ্চয় তোমাকে তাঁর পায়ে এসে পড়তে হবে, বেদান্ত যাবে কোথায় ভেসে! সময় প্রায় হয়ে এল।
পুষ্প। বুঝতে পারছি। কদিন ধরে কেবলই বাঁ চোখ নাচছে।
ফকির। নাচছে? বটে! ঐ দেখো, অব্যর্থ তাঁর বাক্য। টান ধরেছে।
পুষ্প। কিন্তু আগে থাকতে বলে রাখছি, ছাই করে দেবার মতো মালমসলা আমার মধ্যে বেশি পাবেন না। যা ছিল সব পাস করতে করতে য়ুনিভার্সিটির আঁস্তাকুড়ে ভর্তি করে দিয়েছি।
হৈমবতী। কী বলছ ভাই, পুষ্পদিদি! কোন্ ভূতে আবার তোমাকে পেল।
পুষ্প। কী জানি ভাই, দেশের হাওয়ায় এটা ঘটায়। বুদ্ধিতে কাঁপন দিয়ে হঠাৎ আসে যেন ম্যালেরিয়ার গুরুগুরুনি। মনে হচ্ছে, রবি ঠাকুরের একটা গান শুনেছিলুম—
কে কোথা ধরা পড়ে কে জানে!
ফকির। পুষ্পদি, তুমি যে এতদূর এগিয়েছ তা আমি জানতুম না। পূর্বজন্মের কর্মফল আর কি!
পুষ্প। নিশ্চয়ই, অনেক জন্মের অবুদ্ধিকে দম দিতে দিতে এমন অদ্ভূত বুদ্ধি হঠাৎ পাক খেয়ে ওঠে— তার পরে আর রক্ষে নেই।
ফকির। উঃ, আশ্চর্য! ধন্য তুমি! সংসারে কেউ কেউ থাকে যাকে একেবারেই— কী বলব!
পুষ্প। একেবারে শেষের দিক থেকেই শুরু করে। রবি ঠাকুর বলেছেন—
ফকির। বা বা, বেশ বলেছেন রবি ঠাকুর— আমি তো কখনো পড়ি নি!
পুষ্প। ভালো করেছ, পড়লে বিপদেই পড়তে। ভাই হৈমি, তোর সেই মটরদানার দুনলী হারটা আমাকে দে দেখি। মহাপুরুষদের দর্শনে খালি হাতে যেতে নেই।
হৈম। কী বল, দিদি! ও যে আমার শাশুড়ির দেওয়া!
পুষ্প। এ মানুষটিও তো তোর শাশুড়ির দেওয়া, এও যেখানে তলিয়েছে ওটাও সেখানে যাবে নাহয়।