ওরা প্রাণ-ঝরণার উচ্ছল ধার
ঝরিয়া ঝরিয়া বহে অনিবার,
চিরতাপসিনী ধরণীর ওরা শ্যামশিখা হোমানল॥
রাজা। সাধু সাধু! কিন্তু নটরাজ, এ হল ললিত চাঞ্চল্য— এবার একটা দুর্ললিত চাঞ্চল্য দেখিয়ে দাও।
নটরাজ। এমন চাঞ্চল্য আছে যাতে বাঁধন শক্ত করে, আবার এমন আছে যাতে শিকল ছেঁড়ে। সেই মুক্তির উদ্বেগ আছে শ্রাবণের অন্তরে। এসো তো বিজুলি, এসো বিপাশা।
হা রে, রে রে, রে রে, আমায় ছেড়ে দে রে, দে রে—
যেমন ছাড়া বনের পাখি মনের আনন্দে রে।
ঘন শ্রাবণধারা যেমন বাঁধন-হারা,
বাদল বাতাস যেমন ডাকাত আকাশ লুটে ফেরে।
হারে, রে রে, রে রে, আমায় রাখবে ধ’রে কে রে—
দাবানলের নাচন যেমন সকল কানন ঘেরে,
বজ্র যেমন বেগে গর্জে ঝড়ের মেঘে,
অট্টহাস্যে সকল বিঘ্ন- বাধার বক্ষ চেরে॥
সভাকবি। মহারাজ, আমাদের দুর্বল রুচি, ক্ষীণ আমাদের পরিপাকশক্তি। আমাদের প্রতি দয়ামায়া রাখবেন। জানেন তো, ব্রাহ্মণা মধুরপ্রিয়াঃ। রুদ্ররস রাজন্যদেরই মানায়।
নটরাজ। আচ্ছা, তবে শোনো। কিন্তু বলে রাখছি, রস জোগান দিলেই যে রস ভোগ করা যায় তা নয়, নিজের অন্তরে রসরাজের দয়া থাকা চাই।
মম মন-উপবনে চলে অভিসারে আঁধার রাতে বিরহিণী
রক্তে তারি নূপুর বাজে রিনি রিনি।
দুরু দুরু করে হিয়া,
মেঘ উঠে গরজিয়া,
ঝিল্লি ঝনকে ঝিনি ঝিনি।
মম মন-উপবনে ঝরে বারিধারা,
গগনে নাহি শশী তারা।
বিজুলির চমকনে
মিলে আলো খনে খনে,
খনে খনে পথ ভোলে উদাসিনী।
নটরাজ। অরণ্য আজ গীতহীন, বর্ষাধারায় নেচে চলেছে জলস্রোত বনের প্রঙ্গণে—যমুনা, তোমরা তারই প্রচ্ছন্ন সুরের নৃত্য দেখিয়ে দাও মহারাজকে।
রাজা। তোমার পালা বোধ হচ্ছে শেষের দিকে পৌঁছল— এইবার গভীরে নামো যেখানে শান্তি, যেখানে স্তব্ধতা, যেখানে