নুটু। রানী, এখনো তো দোলপূর্ণিমার দেরি আছে।
অমিতা। বসন্তিকা, তাতে ক্ষতি কী?
নুটু। এখনো শীত রয়েছে যে। বসন্তের গান কি এখন—
অমিতা। এই তো সময়। শীতের হৃদয়ের মধ্যেই বসন্তের ধ্যানমূর্তি।
নুটু। হৃদয়ের ভিতর কী আছে তা তোমার কবিই জানে। কিন্তু বাইরের দিকে চেয়ে দেখো সমস্ত পাতা যে ঝরিয়ে দিলে।
অমিতা। নবীনের জন্যে নূতন করে আসন পাতবার ভার নিয়েছে শীত।
নুটু। কিন্তু বনের মধ্যে যেন ডাকাত পড়েছে— নিষ্ঠুর তার কাজ।
অমিতা। বসন্তিকা, সুন্দরকে যদি চাস তো তার সাধনা কঠোর সে-কথা মনে রাখিস। শীতের কাজ বড়ো কঠোর, সমস্ত উজাড় করে দিয়ে তবে সে সুন্দরকে পায়।
নুটু। তা ভালো। কিন্তু এই তো তোমার পুঁথি। সুন্দরের পালা এতে তো সমস্তটা নেই। ছাড়া ছাড়া কতকগুলো গান। এ কি ভালো হবে?
অমিতা। কবিকে জিজ্ঞাসা করেছিলুম। কবি বললেন, এ কি যুদ্ধ পেয়েছ রানী, যে সৈন্য একেবারে দলেবলে এসে দুর্গ দখল করবে? সুন্দরের দূত এখানে-ওখানে একটি-দুটি করে আসে, উঁকি মেরে যায়। দেখিস নি আমাদের বাগানে কোথাও বা দুটো-একটা অশোকের কুঁড়ি ধরেছে, কোথাও বা একটি-দুটি মাধবী ফোটে-ফোটে করছে— সবই খাপছাড়া। কিন্তু সেই অল্পটুকুতেই অনেকখানির ভূমিকা।
নুটু। এটা কবির কুঁড়েমি। সমস্তটা লিখতে মন যাচ্ছে না— কোনোমতে গোটাকতক গান বানিয়ে দিয়ে কাজ সারতে চান।
অমিতা। কবি বলেছেন, পালা অভিনয় হতে হতে দিনে দিনে সমস্ত গান যখন সম্পূর্ণ হয়ে উঠবে, তখন দোলপূর্ণিমা এসে পড়বে। অশোকবনেরও সেই নিয়ম, পলাশবনেরও সেই রীতি;তাদের উৎসব জমে উঠতে সময় লাগে। কিন্তু আর তোকে ব্যাখ্যা করতে পারি নে। এইবার আরম্ভ হোক। সবাইকে ডাক-না।
নুটু। সবাই প্রস্তুত আছে। আচার্য সুরেশ্বর, ধরো তোমার যন্ত্র। মঞ্জুলা গান আরম্ভ করো।
অমিতা। ও কি? শুধু গান, সে হবে না।
নুটু। আর কি চাই রানী?
স্থল জলে নভতলে বনে উপবনে
নদীনদে গিরিগুহা-পারাবারে
নিত্য জাগে সরস সংগীতমধুরিমা,
নিত্য নৃত্যরসভঙ্গিমা।
নব বসন্তে নব আনন্দ, উৎসব নব।