বাঁশরি। সুষমার ভাগ্য ভালো কিন্তু সোমশংকরকে কী তুমি দিলে।
পুরন্দর। সে পুরুষ, সে ক্ষত্রিয়, সে তপস্বী।
বাঁশরি। হোক পুরুষ, হোক ক্ষত্রিয়, তার তপস্যা অপূর্ণ থাকবে আমি না থাকলে, আবশ্যক আছে আমাকে।
পুরন্দর। বঞ্চিত হবার দুঃখই তাকে দেবে শক্তি।
বাঁশরি। কখনোই না, তাতেই পঙ্গু করবে তার ব্রত। যে পারে ঐ ক্ষত্রিয়কে শক্তি দিতে এমন কেবল একটি মেয়ে আছে এ-সংসারে।
পুরন্দর। জানি।
বাঁশরি। সে সুষমা নয়।
পুরন্দর। তাও জানি। কিন্তু ঐ বীরের শক্তি হরণ করতে পারে, এমনও একটিমাত্র মেয়ে আছে এ-সংসারে।
বাঁশরি। আজ অভয় দিচ্ছে সে। আপন অন্তরের মধ্যে সে আপনি পেয়েছে দীক্ষা। তার বন্ধন ঘুচেছে, সে আর বাঁধবে না।
পুরন্দর। তবে আজ যাবার দিনে নিঃসংকোচে তারই হাতে রেখে গেলেম সোমশংকরের দুর্গম পথের পাথেয়।
বাঁশরি। এতদিন আমার যত প্রণাম বাকি ছিল সব একত্র করে আজ এই দিলেম তোমার পায়ে।
পুরন্দর। আর আমি দিয়ে গেলেম, তোমাকে একটি গান, তোমার কণ্ঠে সেটিকে গ্রহণ করো।
বসুন্ধরার পঞ্জরতলে কম্পন জাগে শঙ্কার।
আকাশেতে ঘোরে ঘূর্ণী
সৃষ্টির বাঁধ চূর্ণি,
বজ্রভীষণ গর্জনরব প্রলয়ের জয়ডঙ্কার।
স্বর্গ উঠিছে ক্রন্দি,
সুরপরিষদ বন্দী,
তিমিরগহন দুঃসহ রাতে উঠে শৃঙ্খলঝংকার।
দানবদম্ভ তর্জি
রুদ্র উঠিল গর্জি,
লণ্ডভণ্ড লুটিল ধুলায় অভ্রভেদী অহংকার॥