সন্ন্যাসী। তবে এক কাজ করো। ওই কাশবন থেকে কাশ তুলে নিয়ে এসো। আঁচল ভরে ধানের মঞ্জরী আনতে হবে। আর, তোমরা আজ শিউলিফুলের মালা গেঁথে ঐখানে ফেলে রেখে গেছ, সেগুলি নিয়ে এসো।
প্রথম বালক। কী করতে হবে ঠাকুর?
সন্ন্যাসী। আমাকে তোমরা সাজিয়ে দেবে—আমি হব শারদোৎসবের পুরোহিত।
সকলে। ( হাততালি দিয়া ) হাঁ, হাঁ, হাঁ! সে বড়ো মজাই হবে।
কাশগুচ্ছ প্রভৃতি আনিয়া ছেলেরা সকলে মিলিয়া
সন্ন্যাসীকে সাজাইতে প্রবৃত্ত হইল
প্রথম ব্যক্তি। ওরে ছোঁড়াগুলো, সন্ন্যাসী কোথায় গেল রে?
দ্বিতীয় ব্যক্তি। কই বাবা, সন্ন্যাসী কই?
বালকগণ। এই-যে আমাদের সন্ন্যাসী।
প্রথম ব্যক্তি। ও তো তোদের খেলার সন্ন্যাসী! সত্যিকার সন্ন্যাসী কোথায় গেলেন?
সন্ন্যাসী। সত্যিকার সন্ন্যাসী কি সহজে মেলে? আমি এই ছেলেদের সঙ্গে মিলে সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসী খেলছি।
প্রথম ব্যক্তি। ও তোমার কী রকম খেলা গা!
দ্বিতীয় ব্যক্তি। ওতে যে অপরাধ হবে।
তৃতীয় ব্যক্তি। ফেলো ফেলো, তোমার জটা ফেলো।
চতুর্থ ব্যক্তি। দেখো-না, আবার গেরুয়া পরেছে!
সন্ন্যাসী। জটাও ফেলব, গেরুয়াও ছাড়ব, সবই হবে, খেলাটা সম্পূর্ণ হয়ে যাক।
প্রথম ব্যক্তি। তবে যে আমাদের কে একজন বললে কোথাকার কোন্ একজন স্বামী এসেছে!
সন্ন্যাসী। যদি বা এসে থাকে তাকে দিয়ে তোমাদের কোনো কাজ হবে না।
দ্বিতীয় ব্যক্তি। কেন? সে ভণ্ড নাকি?
সন্ন্যাসী। তা নয় তো কী?
তৃতীয় ব্যক্তি। বাবা, তোমার চেহারাটি কিন্তু ভালো। তুমি মন্ত্রতন্ত্র কিছু শিখেছ?
সন্ন্যাসী। শেখবার ইচ্ছা তো আছে, কিন্তু শেখায় কে?
তৃতীয় ব্যক্তি। একটি লোক আছে বাবা—সে থাকে ভৈরবপুরে, লোকটা বেতালসিদ্ধ। একটি লোকের ছেলে মারা যাচ্ছিল, তার বাপ এসে ধরে পড়তেই লোকটা করলে কী, সেই ছেলেটার প্রাণপুরুষকে একটা নেকড়ে বাঘের মধ্যে চালান করে দিলে। বললে বিশ্বাস করবে না—ছেলেটা মোল বটে, কিন্তু নেকড়েটা আজও দিব্যি বেঁচে আছে। না, হাসছ কী? আমার সম্বন্ধী স্বচক্ষে দেখে এসেছে। সেই নেকড়েটাকে মারতে গেলে বাপ লাঠি হাতে ছুটে আসে। তাকে দু বেলা ছাগল খাইয়ে লোকটা ফতুর হয়ে গেল। বিদ্যে শিখতে চাও তো সেই সন্ন্যাসীর কাছে যাও।
প্রথম ব্যক্তি। ওরে চল্ রে, বেলা হয়ে গেল। সন্ন্যাসী-ফন্ন্যাসী সব মিথ্যে। সে কথা আমি তো তখনই বলেছিলেম। আজকালকার দিনে কি আর সেরকম যোগবল আছে!