Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://rabindra-rachanabali.nltr.org)
সে - ৬,৩৬
সে
দেখে আমরা হেসে মরি। আধুনিক বাঘের মধ্যে সব চেয়ে বড়ো জ্ঞানী শার্দৌল্যতত্ত্বরত্ন বলেন, জীবসৃষ্টির শেষের পালায় বিশ্বকর্মার মালমসলা যখন সমস্তই কাবার হয়ে গেল তখনই মানুষ গড়তে তাঁর হঠাৎ শখ হল। তাই বেচারাদের পায়ের তলার জন্যে থাবা দূরে থাক্ কয়েক টুকরো খুরের জোগাড় করতে পারলেন না, জুতো পরে তবে ওরা পায়ের লজ্জা নিবারণ করতে পারে — আর, গায়ের লজ্জা ঢাকে ওরা কাপড়ে জড়িয়ে। সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র ওরাই হল লজ্জিত জীব। এত লজ্জা জীবলোকে আর কোথাও নেই।
বাঘেদের বুঝি ভারি অহংকার?
ভয়ংকর। সেইজন্যেই তো ওরা এত করে জাত বাঁচিয়ে চলে। জাতের দোহাই পেড়ে একটা বাঘের খাওয়া বন্ধ করেছিল একজন মানুষের মেয়ে ; তাই নিয়ে আমাদের সে একটা ছড়া বানিয়েছে।
তোমার মতো সে আবার ছড়া বানাতে পারে নাকি।
তার নিজের বিশ্বাস সে পারে, এই তর্ক নিয়ে তো পুলিস ডাকা যায় না।
আচ্ছা, শোনাও - না।
তবে শোনো —
এক ছিল মোটা কেঁদো বাঘ,
গায়ে তার কালো কালো দাগ।
বেহারাকে খেতে ঘরে ঢুকে
আয়নাটা পড়েছে সমুখে।
এক ছুটে পালালো বেহারা,
বাঘ দেখে আপন চেহারা।
গাঁ - গাঁ করে ডেকে ওঠে রাগে,
দেহ কেন ভরা কালো দাগে।
ঢেঁকিশালে পুঁটু ধান ভানে,
বাঘ এসে দাঁড়ালো সেখানে।
ফুলিয়ে ভীষণ দুই গোঁফ
বলে, চাই গ্লিসেরিন সোপ।
পুঁটু বলে, ও কথাটা কী যে
জন্মেও জানি নে তা নিজে।
ইংরেজি - টিংরেজি কিছু
শিখি নি তো, জাতে আমি নিচু।
বাঘ বলে, কথা বল ঝুঁটো,