আমি বললুম, লোকসান সইবে না, যেখানে থাকে ফিরে আসবেই। কিন্তু হয়েছে কী।
পাল্লারাম বললে, পরশুদিন সন্ধের সময় দিদি গিয়েছিল জঙ্গিলাটের বাড়ি। লাটগিন্নির সঙ্গে গঙ্গাজল পাতিয়েছে। ফিরে এসে দেখে, একটা ঘটি, একটা ছাতা, একজোড়া তাস, হারিকেন লণ্ঠন, আর একটা পাথুরে কয়লার ছালা নিয়ে কোথায় সে চলে গেছে। দিদি বাগান থেকে একঝুড়ি বাঁশের কোঁড়া, লাউডগা আর বেতোশাক তুলে রেখেছিল ; তাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দিদি ভারি রাগ করছে।
আমি বললুম, তা আমি কী করব।
পাল্লারাম বললে, তোমার এখানে কোথায় সে লুকিয়ে আছে, তাকে বের করে দাও।
আমি বললুম, এখানে নেই, তুমি থানায় খবর দাও গে।
নিশ্চয় আছে।
আমি বললুম, ভালো মুশকিলে ফেললে দেখছি! বলছি সে নেই।
‘ নিশ্চয় আছে, নিশ্চয় আছে' বলতে বলতে পাল্লারাম আমার টেবিলের উপর দমাদ্দম তার বাঁশের লাঠির মুণ্ডটা ঠুকতে লাগল। পাশের বাড়িতে একটা পাগল ছিল, সে শেয়াল ডাকের নকল করে হাঁক দিল ‘হুক্কাহুয়া'। পাড়ার সব কুকুর চেঁচিয়ে উঠল। বনমালী আমার জন্যে এক গ্লাস বেলের শরবত রেখে গিয়েছিল, সেটা উল্টিয়ে বোতল ভেঙে বেগ্নি রঙের কালির সঙ্গে মিশে রেশমের চাদর বেয়ে আমার জুতোর মধ্যে গিয়ে জমল। চীৎকার করতে লাগলুম, বনমালী, বনমালী!
বনমালী ঘরে ঢুকেই পাল্লারামের চোহারা দেখে ‘বাপ রে' ‘মা রে' বলে চেঁচাতে চেঁচাতে দৌড় দিলে।
হঠাৎ মনে পড়ে গেল ; বললেম, সে গেছে কনের খোঁজ করতে।
কোথায়।
মজাদিঘির ধারে বাঁশতলায়।
লোকটা বললে, সেখানে যে আমারই বাড়ি।
তা হলে ঠিক হয়েছে। তোমার মেয়ে আছে?
আছে।
এইবার তোমার মেয়ের পাত্র জুটল।
জুটল এখনো বলা যায় না। এই ডাণ্ডা নিয়ে ঘাড়ে ধরে তার বিয়ে দেব, তার পরে বুঝব কন্যাদায় ঘুচল।
তা হলে আর দেরি কোরো না। কনে দেখার পরেই বরকে দেখা হয়তো সহজ হবে না।
সে বললে, ঠিক কথা।
একটা ভাঙা বালতি ছিল ঘরের বাইরে। সেটা ফস্ করে তুলে নিলে। জিগেস করলেম, ওটা নিয়ে কী হবে।
ও বললে, বড়ো রোদ্দুর, টুপির মতো করে পরব।
ও তো গেল। তখন কাক ডাকছে, ট্রামের শব্দ শুরু হয়েছে। বিছানা থেক ধড়ফড়্ করে উঠেই ডাক দিলেম বনমালীকে। জিগেস করলেম, ঘরে কে ঢুকেছিল।
ও চোখ রগড়ে বললে, দিদিমণির বেড়ালটা।
এই পর্যন্ত শুনে পুপেদিদি হতাশভাবে বললে, ও কী কথা দাদামশায়, তুমি যে বলছিলে, তুমি নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিলে,