পঞ্জা। জান না, চালটা অতি প্রাচীন, চলনটাই আধুনিক, অপোগণ্ড, অর্বাচীন, অজাতশ্মশ্রু।
ছক্কা। গুরুমশায়ের হাতে মানুষ হও নি। কেউ বুঝিয়ে দেয় নি, রাস্তায় ঘাটে খানা আছে, ডোবা আছে, কাঁটা আছে, খোঁচা আছে— চলন জিনিসটার আপদ বিস্তর।
রাজপুত্র। এ দেশটা তো গুরুমশায়েরই দেশ। শরণ নেব তাঁদের।
ছক্কা। এবার তোমাদের পরিচয়টা?
রাজপুত্র। আমরা বিদেশী।
পঞ্জা। বাস্। আর, বলতে হবে না। তার মানে, তোমাদের জাত নেই, কুল নেই, গোত্র নেই, গাঁই নেই, ঞ্জাত নেই, গুষ্টি নেই, শ্রেণী নেই, পঙ্ক্তি নেই।
রাজপুত্র। কিছু নেই, কিছু নেই— সব বাদ দিয়ে এই যা আছে, দেখছই তো। এখন তোমাদের পরিচয়টা?
ছক্কা। আমরা ভুবনবিখ্যাত তাসবংশীয়। আমি ছক্কা শর্মণ।
পঞ্জা। আমি পঞ্জা বর্মণ।
রাজপুত্র। ঐ যারা সংকোচে দূরে দাঁড়িয়ে?
ছক্কা। কালো-হানো, ঐ তিরি ঘোষ।
পঞ্জা। আর, রাঙা-মতো এই দুরি দাস।
সদাগর। তোমাদের উৎপত্তি কোথা থেকে।
ছক্কা। ব্রহ্মা হয়রান হয়ে পড়লেন সৃষ্টির কাজে। তখন বিকেল বেলাটায় প্রথম যে হাই তুললেন, পবিত্র সেই হাই থেকে আমাদের উদ্ভব।
পঞ্জা। এই কারণে কোনো কোনো ম্লেচ্ছভাষায় আমাদের তাসবংশীয় না বলে হাইবংশীয় বলে।
সদাগর। আশ্চর্য।
ছক্কা। শুভ গোধূলিলগ্নে পিতামহ চার মুখে একসঙ্গে তুললেন চার হাই।
সদাগর। বাস্ রে। ফল হল কী।
ছক্কা। বেরিয়ে পড়ল ফস্ ফস্ করে ইস্কাবন, রুইতন, হরতন, চিঁড়েতন। এঁরা সকলেই প্রণম্য। (প্রণাম)
রাজপুত্র। সকলেই কুলীন?
ছক্কা। কুলীন বৈকি। মুখ্য কুলীন। মুখ থেকে উৎপত্তি।
পঞ্জা। তাসবংশের আদিকবি ভগবান তাসরঙ্গনিধি দিনের চার প্রহর ঘুমিয়ে স্বপ্নের ঘোরে প্রথম যে ছন্দ বানালেন সেই ছন্দের মাত্রা গুনে গুনে আমাদের সাড়ে-সাঁইত্রিশ রকমের পদ্ধতির উদ্ভব।
রাজপুত্র। অন্তত তার একটাও তো জানা চাই।
পঞ্জা। আচ্ছা, তা হলে মুখ ফেরাও।
রাজপুত্র। কেন।
পঞ্জা। নিয়ম। ভাই ছক্কা, ঠুং মন্ত্র প’ড়ে ওদের কানে একটা ফুঁ দিয়ে দাও।
রাজপুত্র। কেন।
পঞ্জা। নিয়ম।