ঠাকুরদা। সাড়াশব্দ তো কিছুই পাই নে।
সুদর্শনা। চলে গিয়েছেন! তোমার বন্ধু এমনি বন্ধু!
ঠাকুরদা। সেইজন্যে লোকে তাকে নিন্দেও করে, সন্দেহও করে। কিন্তু আমার রাজা তাতে খেয়ালও করে না।
সুদর্শনা। চলে গেলেন! ওরে ওরে, কী কঠিন, কী কঠিন! একবারে পাথর, একেবারে বজ্র! সমস্ত বুক দিয়ে ঠেলছি— বুক ফেটে গেল— কিন্তু নড়ল না!
ঠাকুরদা, এমন বন্ধুকে নিয়ে তোমার চলে কী করে।
ঠাকুরদা। চিনে নিয়েছি যে— সুখে দুঃখে তাকে চিনে নিয়েছি— এখন আর সে কাঁদাতে পারে না।
সুদর্শনা। আমাকেও সে কি চিনতে দেবে না।
ঠাকুরদা। দেবে বৈকি— নইলে এত দুঃখ দিচ্ছে কেন। ভালো করে চিনিয়ে তবে ছাড়বে। সে তো সহজ লোক নয়।
সুদর্শনা। আচ্ছা আচ্ছা, দেখব তার কতবড়ো নিষ্ঠুরতা। এই জানলার কাছে আমি চুপ করে পড়ে থাকব, এক পা নড়ব না— দেখি সে কেমন না আসে।
ঠাকুরদা। দিদি, তোমার বয়স অল্প, জেদ করে অনেক দিন পড়ে থাকতে পার। কিন্তু আমার যে এক মুহূর্ত গেলেও লোকসান বোধ হয়। পাই না-পাই একবার খুঁজতে বেরোব।
সুদর্শনা। চাই নে, তাকে চাই নে। সুরঙ্গমা, তোর রাজাকে আমি চাই নে। কিসের জন্যে সে যুদ্ধ করতে এল। আমার জন্যে একেবারেই না? কেবল বীরত্ব দেখাবার জন্যে?
সুরঙ্গমা। দেখাবার ইচ্ছে তাঁর যদি থাকত তা হলে এমন করে দেখাতেন, কারো আর সন্দেহ থাকত না। দেখালেন আর কই।
সুদর্শনা। যা যা, চলে যা— তোর কথা অসহ্য বোধ হচ্ছে। এত নত করলে তবু সাধ মিটল না? বিশ্বসুদ্ধ লোকের সামনে আমাকে এইখানে ফেলে রেখে দিয়ে চলে গেল?
প্রথম। ওহে, এতগুলো রাজা একত্র হয়ে লড়াই বাধিয়ে দিয়ে, ভাবলুম খুব তামাশা হবে— কিন্তু দেখতে দেখতে কী যে হয়ে গেল ভালো বোঝাই গেল না।
দ্বিতীয়। দেখলে না? ওদের নিজেদের মধ্যেই গোলমাল বেধে গেল— কেউ যে কাউকে বিশ্বাস করে না।
তৃতীয়। পরামর্শ ঠিক রইল না যে। কেউ এগোতে চায়, কেউ পিছোতে চায়; কেউ এ দিকে যায়, কেউ ও দিকে যায়, একে কি আর যুদ্ধ বলে।
প্রথম। ওরা তো লড়াইয়ের দিকে চোখ রাখে নি— ওরা পরস্পরের দিকেই চোখ রেখেছিল।
দ্বিতীয়। কেবলই ভাবছিল— লড়াই করে মরব আমি, আর তার ফল ভোগ করবে আর-কেউ।
তৃতীয়। কিন্তু লড়েছিল কাঞ্চীরাজ, সে কথা বলতেই হবে।