Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://rabindra-rachanabali.nltr.org)
তাসের দেশ -প্রথম দৃশ্য,৫
তাসের দেশ
রাজপুত্র। আছে আমার গোপন কথা, সে কথাটা গোপন রয়েছে দূরের আকাশে। সমুদ্রের ধারে বসে থাকি পশ্চিম দিগন্তের দিকে চেয়ে। সেইখানে আমার অদৃষ্ট যা যক্ষের ধনের মতো গোপন করে রেখেছে যাব তারই সন্ধানে।
গান
যাবই আমি যাবই ওগো
বাণিজ্যেতে যাবই।
লক্ষ্মীরে হারাবই যদি
অলক্ষ্মীরে পাবই।
বাণিজ্যেতে যাবই।
লক্ষ্মীরে হারাবই যদি
অলক্ষ্মীরে পাবই।
সদাগর। ও কী কথা। বাণিজ্য? ও যে তুমি সদাগরের মন্ত্র আওড়াচ্ছ।
রাজপুত্র।
সাজিয়ে নিয়ে জাহাজখানি
বসিয়ে হাজার দাঁড়ি
কোন্ পুরীতে যাব দিয়ে
কোন্ সাগরে পাড়ি।
কোন্ তারকা লক্ষ্য করি
কূল-কিনারা পরিহরি
কোন্ দিকে যে বাইব তরী
বিরাট কালো নীরে—
মরব না আর ব্যর্থ আশায়
সোনার বালুর তীরে।
বসিয়ে হাজার দাঁড়ি
কোন্ পুরীতে যাব দিয়ে
কোন্ সাগরে পাড়ি।
কোন্ তারকা লক্ষ্য করি
কূল-কিনারা পরিহরি
কোন্ দিকে যে বাইব তরী
বিরাট কালো নীরে—
মরব না আর ব্যর্থ আশায়
সোনার বালুর তীরে।
সদাগর। অকূলের নাবিকগিরি ক’রে নিরুদ্দেশ হওয়া, এ তো বাণিজ্যের রাস্তা নয়। খবর কিছু পেয়েছ কি।
রাজপুত্র। পেয়েছি বৈকি। পেয়েছি আভাসে, পেয়েছি স্বপ্নে।
নীলের কোলে শ্যামল সে দ্বীপ
প্রবাল দিয়ে ঘেরা।
শৈলচূড়ায় নীড় বেঁধেছে
সাগরবিহঙ্গেরা।
নারিকেলের শাখে শাখে
ঝোড়ো হাওয়া কেবল ডাকে,
ঘন বনের ফাঁকে ফাঁকে
বইছে নগনদী।
সাত রাজার ধন মানিক পাবই
সেথায় নামি যদি॥
প্রবাল দিয়ে ঘেরা।
শৈলচূড়ায় নীড় বেঁধেছে
সাগরবিহঙ্গেরা।
নারিকেলের শাখে শাখে
ঝোড়ো হাওয়া কেবল ডাকে,
ঘন বনের ফাঁকে ফাঁকে
বইছে নগনদী।
সাত রাজার ধন মানিক পাবই
সেথায় নামি যদি॥
সদাগর। তোমার গানের সুরে বোঝা যাচ্ছে, এ মানিকটি তো সদাগরি মানিক নয়, এ মানিকের নাম বলো তো।