একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিনু
“চেয়ে দেখো” “চেয়ে দেখো” বলে যেন বিনু।
চেয়ে দেখি, ঠোকাঠুকি বরগা কড়িতে,
কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে।
ইঁটে-গড়া গণ্ডার বাড়িগুলো সোজা
চলিয়াছে দুদ্দাড় জানালা দরজা।
রাস্তা চলেচে যত অজগর সাপ,
পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপ্ ধাপ্।
দোকান বাজার সব নামে আর উঠে,
ছাদের গায়েতে ছাদ মরে মাথা কুটে।
হাওড়ার ব্রিজ চলে মস্ত সে বিছে,
হ্যারিসন্ রোড চলে তার পিছে পিছে।
মনুমেণ্টের দোল যেন ক্ষ্যাপা হাতি
শূন্যে দুলায়ে শুঁড় উঠিয়াছে মাতি।
আমাদের ইস্কুল ছোটে হন্হন্,
অঙ্কের বই ছোটে, ছোটে ব্যাকরণ।
ম্যাপগুলো দেয়ালেতে করে ছট্ফট্,
পাখি যেন মারিতেছে পাখার ঝাপট।
ঘণ্টা কেবলি দোলে ঢঙ্ ঢঙ্ বাজে—
যত কেন বেলা হোক তবু থামে না-যে।
লক্ষ লক্ষ লোক বলে, “থামো থামো”।
কোথা হতে কোথা যাবে এ কী পাগ্লামো।”
কলিকাতা শোনে না কো চলার খেয়ালে—
নৃত্যের নেশা তার স্তম্ভে দেয়ালে।
আমি মনে মনে ভাবি চিন্তা তো নাই,
কলিকাতা যাক নাকো সোজা বোম্বাই।
দিল্লি লাহোরে যাক, যাক না আগরা,
মাথায় পাগ্ড়ি দেবো, পায়েতে নাগ্রা।
কিম্বা সে যদি আজ বিলাতেই ছোটে
ইংরেজ হবে সবে বুট হ্যাট্ কোটে।
কিসের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল যেই
দেখি, কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই॥