সুদর্শনা। না, কই, গন্ধ পাচ্ছি নে তো।
সুরঙ্গমা। বড়ো দরজাটা খুলেছে— তিনি আসছেন, ভিতরে আসছেন।
সুদর্শনা। তুই কেমন করে টের পাস।
সুরঙ্গমা। কী জানি মা। আমার মনে হয় যেন আমার বুকের ভিতরে পায়ের শব্দ পাচ্ছি। আমি তাঁর এই অন্ধকার ঘরের সেবিকা কিনা, তাই আমার একটা বোধ জন্মে গেছে— আমার বোঝবার জন্যে কিছুই দেখবার দরকার হয় না।
সুদর্শনা। আমার যদি তোর মতো হয় তা হলে যে বেঁচে যাই।
সুরঙ্গমা। হবে মা, হবে। তুমি দেখব দেখব করে যে অত্যন্ত চঞ্চল হয়ে রয়েছ সেইজন্যে কেবল দেখবার দিকেই তোমার সমস্ত মন পড়ে রয়েছে। সেইটে যখন ছেড়ে দেবে তখন সব আপনি সহজ হয়ে যাবে।
সুদর্শনা। দাসী হয়ে তোর এত সহজ হল কী করে? রানী হয়ে আমার হয় না কেন?
সুরঙ্গমা। আমি যে দাসী, সেইজন্যেই এত সহজ হল। আমাকে যেদিন তিনি এই অন্ধকার ঘরের ভার দিয়ে বললেন ‘সুরঙ্গমা, এই ঘরটা প্রতিদিন তুমি প্রস্তুত করে রেখো এই তোমার কাজ’ তখন আমি তাঁর আজ্ঞা মাথায় করে নিলুম— আমি মনে মনেও বলি নি, ‘যারা তোমার আলোর ঘরে আলো জ্বালে তাদের কাজটি আমাকে দাও।’ তাই যে কাজটি নিলুম তার শক্তি আপনি জেগে উঠল, কোনো বাধা পেল না। ঐ-যে তিনি আসছেন— ঘরের বাইরে এসে দাঁড়িয়েছেন। প্রভু!
বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে।
দাও, সাড়া দাও, এই দিকে চাও,
এসো দুই বাহু বাড়ায়ে।
কাজ হয়ে গেছে সারা,
উঠেছে সন্ধ্যাতারা,
আলোকের খেয়া হয়ে গেল দেয়া
অস্তসাগর পারায়ে।
এসেছি দুয়ারে এসেছি, আমারে
বাহিরে রেখো না দাঁড়ায়ে।
ভরি লয়ে ঝারি এনেছ কি বারি,
সেজেছ কি শুচি দুকূলে।
বেঁধেছ কি চুল, তুলেছ কি ফুল,
গেঁথেছ কি মালা মুকূলে।
ধেনু এল গোঠে ফিরে,
পাখিরা এসেছে নীড়ে,
পথ ছিল যত জুড়িয়া জগত