সেও শোধ করে যায় মাটির দেনা,
আমার এই অলস দিনের ঝরা পাতা
লোকারণ্যকে কিছুই দেয় নি ফিরিয়ে।
তবু মন বলে,
গ্রহণ করাও ফিরিয়ে-দেওয়ার রূপান্তর।
সৃষ্টির ঝর্না বেয়ে যে রস নামছে আকাশে আকাশে
তাকে মেনে নিয়েছি আমার দেহে মনে।
সেই রঙিন ধারায় আমার জীবনে রঙ লেগেছে —
যেমন লেগেছে ধানের খেতে,
যেমন লেগেছে বনের পাতায়,
যেমন লেগেছে শরতে বিবাগী মেঘের উত্তরীয়ে।
এরা সবাই মিলে পূর্ণ করেছে আজকে-দিনের বিশ্বছবি।
আমার মনের মধ্যে চিকিয়ে উঠল আলোর ঝলক,
হেমন্তের আতপ্ত নিশ্বাস শিহর লাগালো
ঘুম-জাগরণের গঙ্গাযমুনায় —
এও কি মেলে নি এই নিখিল ছবির পটে।
জল-স্থল-আকাশের রসসত্রে
অশথের চঞ্চল পাতার সঙ্গে
ঝলমল করছে আমার যে অকারণ খুশি
বিশ্বের ইতিবৃত্তের মধ্যে রইল না তার রেখা,
তবু বিশ্বের প্রকাশের মধ্যে রইল তার শিল্প।
এই রসনিমগ্ন মুহূর্তগুলি
আমার হৃদয়ের রক্তপদ্মের বীজ,
এই নিয়ে ঋতুর দরবারে গাঁথা চলেছে একটি মালা —
আমার চিরজীবনের খুশির মালা।
আজ অকর্মণ্যের এই অখ্যাত দিন
ফাঁক রাখে নি ঐ মালাটিতে —
আজও একটি বীজ পড়েছে গাঁথা।
কাল রাত্রি একা কেটেছে এই জানালার ধারে।
বনের ললাটে লগ্ন ছিল শুক্লপঞ্চমীর চাঁদের রেখা।