Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://rabindra-rachanabali.nltr.org)
ছড়ার ছবি - সুধিয়া,২
ছড়ার ছবি
তাই দেখে ওর একেবারে জ্বলে উঠল বুক —
বলে উঠল, “ দেবতাকে তোর কেন মরিস ডাকি।
তার দয়াটা বাঁচিয়ে যেটুক আজও রইল বাকি
ভার নেব তার নিজের 'পরেই, ঘটুক-নাকো যাই আর,
এর বাড়া তো সর্বনাশের সম্ভাবনা নাই আর। ”
এই বলে সে বাড়ি ছেড়ে পাঁকের পথে ঘুরে
চিহ্ন-দেওয়া নিজের গোরু অনেক দূরে দূরে
গোটা পাঁচেক খোঁজ পেয়ে তার আনলে তাদের কেড়ে,
মাথা ভাঙবে ভয় দেখাতেই সবাই দিল ছেড়ে।
ব্যাবসাটা ফের শুরু করল নেহাত গরিব চালে,
আশা রইল উঠবে জেগে আবার কোনোকালে।
এদিকেতে প্রকাণ্ড এক দেনার অজগরে
একে একে গ্রাস করছে যা আছে তার ঘরে।
একটু যদি এগোয় আবার পিছন দিকে ঠেলে,
দেনা পাওনা দিনরাত্রি জোয়ার-ভাঁটা খেলে।
মাল তদন্ত করতে এল দুনিয়াচাঁদ বেনে,
দশবছরের ছেলেটাকে সঙ্গে করে এনে।
ছেলেটা ওর জেদ ধরেছে — ঐ সুধিয়া গাই
পুষবে ঘরে আপন ক ' রে ওইটে নেহাত চাই।
সামরু বলে, “ তোমার ঘরে কী ধন আছে কত
আমাদের এই সুধিয়াকে কিনে নেবার মতো
ও যে আমার মানিক, আমার সাত রাজার ঐ ধন,
আর যা আমার যায় সবই যাক, দুঃখিত নয় মন।
মৃত্যুপারের থেকে ও যে ফিরেছে মোর কাছে,
এমন বন্ধু তিন ভুবনে আর কি আমার আছে। ”
বাপের কানে কী বললে সেই দুনিচাঁদের ছেলে,
জেদ বেড়ে তার গেল বুঝি যেমনি বাধা পেলে।
শেঠজি বলে মাথা নেড়ে, “ দুই চারিমাস যেতেই
ওই সুধিয়ার গতি হবে আমার গোয়ালেতেই। ”
কালোয় সাদায় মিশোল বরন, চিকন নধর দেহ,
বলে উঠল, “ দেবতাকে তোর কেন মরিস ডাকি।
তার দয়াটা বাঁচিয়ে যেটুক আজও রইল বাকি
ভার নেব তার নিজের 'পরেই, ঘটুক-নাকো যাই আর,
এর বাড়া তো সর্বনাশের সম্ভাবনা নাই আর। ”
এই বলে সে বাড়ি ছেড়ে পাঁকের পথে ঘুরে
চিহ্ন-দেওয়া নিজের গোরু অনেক দূরে দূরে
গোটা পাঁচেক খোঁজ পেয়ে তার আনলে তাদের কেড়ে,
মাথা ভাঙবে ভয় দেখাতেই সবাই দিল ছেড়ে।
ব্যাবসাটা ফের শুরু করল নেহাত গরিব চালে,
আশা রইল উঠবে জেগে আবার কোনোকালে।
এদিকেতে প্রকাণ্ড এক দেনার অজগরে
একে একে গ্রাস করছে যা আছে তার ঘরে।
একটু যদি এগোয় আবার পিছন দিকে ঠেলে,
দেনা পাওনা দিনরাত্রি জোয়ার-ভাঁটা খেলে।
মাল তদন্ত করতে এল দুনিয়াচাঁদ বেনে,
দশবছরের ছেলেটাকে সঙ্গে করে এনে।
ছেলেটা ওর জেদ ধরেছে — ঐ সুধিয়া গাই
পুষবে ঘরে আপন ক ' রে ওইটে নেহাত চাই।
সামরু বলে, “ তোমার ঘরে কী ধন আছে কত
আমাদের এই সুধিয়াকে কিনে নেবার মতো
ও যে আমার মানিক, আমার সাত রাজার ঐ ধন,
আর যা আমার যায় সবই যাক, দুঃখিত নয় মন।
মৃত্যুপারের থেকে ও যে ফিরেছে মোর কাছে,
এমন বন্ধু তিন ভুবনে আর কি আমার আছে। ”
বাপের কানে কী বললে সেই দুনিচাঁদের ছেলে,
জেদ বেড়ে তার গেল বুঝি যেমনি বাধা পেলে।
শেঠজি বলে মাথা নেড়ে, “ দুই চারিমাস যেতেই
ওই সুধিয়ার গতি হবে আমার গোয়ালেতেই। ”
কালোয় সাদায় মিশোল বরন, চিকন নধর দেহ,