গুরু। এসো এসো, মা, এসো। মুখ দেখেই বুঝছি, দৈববাণীর বাহন হয়ে এসেছ।
পুষ্প। ভুল বুঝছেন। আমি ছাই ফেলবার ভাঙা কুলো হয়েই এসেছি। এই আমার সঙ্গে যাকে দেখছেন, এত বড়ো বিশুদ্ধ ছাইয়ের গাদা কোম্পানির মুল্লুকে আর পাবেন না। কোনোদিন ওঁর মধ্যে পৈত্রিক সোনার আভাস হয়তো কিছু ছিল— গুরুর আশীর্বাদে চিহ্নমাত্রই নেই।
গুরু। এসব কথার অর্থ কী।
পুষ্প। অর্থ এই যে, এঁর বাপ এঁকে ত্যাগ করেছেন, ইনি ত্যাগ করতে যাচ্ছেন এঁর স্ত্রীকে। এক পয়সার সম্বল এঁর নেই। শুনেছি, আপনার এখানে সকলরকম আবর্জনারই স্থান আছে, তাই রইলেন ইনি আপনার শ্রীপাদপদ্মে।
ফকির। অ্যাঁ, এ-সব কথা কী বলছ, পুষ্পদি। ঐ তো, সোনার হারগাছা নিয়ে আসা গেল— গুরুচরণে রাখবে না?
পুষ্প। রাখব বৈকি। (গুরুর হাতে দিয়ে) তৃপ্ত হলেন তো?
গুরু। (হারখানা হাতে নিয়ে ওজন আন্দাজ করে) আমার অতি যৎসামান্যেই তৃপ্তি। পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং।
ফকির। ভুল করবেন না প্রভু, ওটা আমারই দান।
পুষ্প। ভুল ভাঙানো জরুরি দরকার, নইলে আসন্ন বিপদ। ওঁর বাবা বিশ্বেশ্বরবাবু পুলিসে খবর দিয়েছেন, তাঁর হার চুরি গেছে। খানাতল্লাসি করতে এখনি আসছে মখলুগঞ্জের বড়ো দারোগা দবিরুদ্দিন সাহেব।
গুরু। (দাঁড়িয়ে উঠে) কী সর্বনাশ!
পুষ্প। কোনো ভয় নেই,এখ্খনি সোনাগুলোকে ভস্ম করে ফেলুন, পুলিসের উপর সেটা প্রকাণ্ড একটা কানমলা হবে।
গুরু। (কাতরস্বরে) বলদেও!
বলদেও। (লাঠি বাগিয়ে) কুছ পরোয়া নেই, ভগবান। আপ তো পরমাত্মা হো, আপকো হুকুমসে হম লঢ়াই করেঙ্গে।
মথুর। গুরুজি, ওর ভরসায় থাকবেন না। ওর ভাঙের নেশা এখনো ভাঙে নি। লালপাগড়ি দেখলেই যাবে ছুটে। আপাতত আপনি দৌড় দিন। কী জানি, এই নোটখানা পরমাত্মার ভরসায় ওর কোন্ মনিবের বাক্স ভেঙে নিয়ে এসছে!
গুরু। অ্যাঁ, বল কি মথুর। পালাব কোথায়। ওরা যে আমার বাসার ঠিকানা জানে। এখন এই ঝুলিটা তোমরা কে রাখবে।
সকলে। কেউ না, কেউ না।
তারিণী। আমার বালা জোড়া ফিরিয়ে দাও।
গুরু। এখ্খনি, এখ্খনি। আর বলদেও, তোমার নোটখানা তুমি নাও, বাবা।
বলদেও। অব্ভি তো নেই সকেঙ্গে। পুলিস চলা জানেসে পিছে লেউঙ্গা।
পুষ্প। আচ্ছা, আমারই হাতে ঝুলিটা দিন। পুলিসের কর্তার সঙ্গে পরিচয় আছে। যার যার জিনিস সবাইকে ফিরিয়ে দেব।
মথুর। ওরে বাস্ রে, স্পাই রে স্পাই. কারও রক্ষা নেই আজ।
গুরু। স্পাই! সর্বনাশ! (উর্ধ্বশ্বাসে) চললুম আমি। মোটরটা আছে?
একজন। আছে।
ফকির। (পায়ে ধরে) প্রভো, আমি কিন্তু ছাড়ছি নে তোমার সঙ্গ।