Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://rabindra-rachanabali.nltr.org)
পূরবী- কঙ্কাল, ১
কঙ্কাল
পশুর কঙ্কাল ওই মাঠের পথের এক পাশে
পড়ে আছে ঘাসে—
যে ঘাস একদা তারে দিয়েছিল বল,
দিয়েছিল বিশ্রাম কোমল।
কালের নীরস অট্টহাসি।
সে যেন রে মরণের অঙ্গুলিনির্দেশ—
ইঙ্গিতে কহিছে মোরে, ‘একদা পশুর যেথা শেষ,
সেথায় তোমারও অন্ত, ভেদ নাহি লেশ।
তোমারও প্রাণের সুরা ফুরাইলে পরে
ভাঙা পাত্র পড়ে রবে অমনি ধুলায় অনাদরে।’
তব শূন্যতার উপহাস।
মোর নহে শুধুমাত্র প্রাণ
সর্ব বিত্ত রিক্ত করি যার হয় যাত্রা অবসান;
যাহা ফুরাইলে দিন
শূন্য অস্থি দিয়ে শোধে আহারনিদ্রার শেষ ঋণ।’
সহসা গেয়েছি যাহা গানে,
ধরে নি তা মরণের বেড়া-ঘেরা প্রাণে।
যা পেয়েছি, যা করেছি দান
মর্তে তার কোথা পরিমাণ।
লঙ্ঘিয়া চলিয়া গেছে চিরসুন্দরের সুরপুরে।
চিরকাল-তরে সে কি থেমে যাবে শেষে
কঙ্কালের সীমানায় এসে।
পড়ে আছে ঘাসে—
যে ঘাস একদা তারে দিয়েছিল বল,
দিয়েছিল বিশ্রাম কোমল।
পড়ে আছে পাণ্ডু অস্থিরাশি
কালের নীরস অট্টহাসি।
সে যেন রে মরণের অঙ্গুলিনির্দেশ—
ইঙ্গিতে কহিছে মোরে, ‘একদা পশুর যেথা শেষ,
সেথায় তোমারও অন্ত, ভেদ নাহি লেশ।
তোমারও প্রাণের সুরা ফুরাইলে পরে
ভাঙা পাত্র পড়ে রবে অমনি ধুলায় অনাদরে।’
আমি বলিলাম, ‘মৃত্যু, করি না বিশ্বাস
তব শূন্যতার উপহাস।
মোর নহে শুধুমাত্র প্রাণ
সর্ব বিত্ত রিক্ত করি যার হয় যাত্রা অবসান;
যাহা ফুরাইলে দিন
শূন্য অস্থি দিয়ে শোধে আহারনিদ্রার শেষ ঋণ।’
ভেবেছি জেনেছি যাহা, বলেছি শুনেছি যাহা কানে,
সহসা গেয়েছি যাহা গানে,
ধরে নি তা মরণের বেড়া-ঘেরা প্রাণে।
যা পেয়েছি, যা করেছি দান
মর্তে তার কোথা পরিমাণ।
আমার মনের নৃত্য, কতবার জীবন-মৃত্যুরে
লঙ্ঘিয়া চলিয়া গেছে চিরসুন্দরের সুরপুরে।
চিরকাল-তরে সে কি থেমে যাবে শেষে
কঙ্কালের সীমানায় এসে।