Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://rabindra-rachanabali.nltr.org)
পূরবী- দোসর, ১
দোসর
দোসর আমার, দোসর ওগো, কোথা থেকে
কোন্ শিশুকাল হতে আমায় গেলে ডেকে।
তাই তো আমি চিরজনম একলা থাকি,
সকল বাঁধন টুটল আমার, একটি কেবল রইল বাকি—
সেই তো তোমার ডাকার বাঁধন, অলখ ডোরে
দিনে দিনে বাঁধল মোরে।
কত ভাষায় কয় যে কথা নব নব।
চমকে উঠে ছুটি যে তাই বাতায়নে,
সকল কাজে বাধা পড়ে, বসে থাকি আপন-মনে—
পারের পাখি আকাশে ধায় উধাও গানে,
চেয়ে থাকি তাহার পানে।
বসন্ত তার পুলক জাগায় ঘাসে ঘাসে,
ফুল-ফোটানো তোমার লিপি সেই কি আনে।
গুঞ্জরিয়া মর্মরিয়া কী বলে যায় কানে কানে,
কে যেন তা বোঝে আমার বক্ষতলে,
ভাসে নয়ন অশ্রুজলে।
ঘরছাড়া মোর ভাব্না-বাউল বেড়ায় ঘুরে।
তারে যখন শুধাই, সে তো কয় না কথা,
নিয়ে আসে স্তব্ধ গভীর নীলাম্বরের নীরবতা।
একতারা তার বাজায় কভু গুন্গুনিয়ে,
রাত কেটে যায় তাই শুনিয়ে।
এবার তবে হোক আমাদের তরী বাওয়া।
কোন্ শিশুকাল হতে আমায় গেলে ডেকে।
তাই তো আমি চিরজনম একলা থাকি,
সকল বাঁধন টুটল আমার, একটি কেবল রইল বাকি—
সেই তো তোমার ডাকার বাঁধন, অলখ ডোরে
দিনে দিনে বাঁধল মোরে।
দোসর ওগো, দোসর আমার, সে ডাক তব
কত ভাষায় কয় যে কথা নব নব।
চমকে উঠে ছুটি যে তাই বাতায়নে,
সকল কাজে বাধা পড়ে, বসে থাকি আপন-মনে—
পারের পাখি আকাশে ধায় উধাও গানে,
চেয়ে থাকি তাহার পানে।
দোসর আমার,দোসর ওগো, যে বাতাসে
বসন্ত তার পুলক জাগায় ঘাসে ঘাসে,
ফুল-ফোটানো তোমার লিপি সেই কি আনে।
গুঞ্জরিয়া মর্মরিয়া কী বলে যায় কানে কানে,
কে যেন তা বোঝে আমার বক্ষতলে,
ভাসে নয়ন অশ্রুজলে।
দোসর ওগো, দোসর আমার, কোন্ সুদূরে
ঘরছাড়া মোর ভাব্না-বাউল বেড়ায় ঘুরে।
তারে যখন শুধাই, সে তো কয় না কথা,
নিয়ে আসে স্তব্ধ গভীর নীলাম্বরের নীরবতা।
একতারা তার বাজায় কভু গুন্গুনিয়ে,
রাত কেটে যায় তাই শুনিয়ে।
দোসর ওগো, দোসর আমার, উঠল হাওয়া—
এবার তবে হোক আমাদের তরী বাওয়া।