ফকির। সোহং সোহং সোহং।
পুষ্প। ব’সে ব’সে আওড়াচ্ছ কী।
ফকির। গুরুমন্ত্র।
পুষ্প। কতদূর এগোল।
ফকির। এই, ইড়া নাড়িটার কাছ পর্যন্ত এসে গেল থেমে।
পুষ্প। হঠাৎ থামে কেন।
ফকির। ঐ আমার ছিঁচকাঁদুনি খুকিটার কীর্তি। মন্তরটা গুরগুর গুরগুর করতে করতে দিব্যি উঠেছিল উপরের দিকে ঠেলে। বোধ হয় আর সিকি ইঞ্চি হলেই পিঙ্গলার মধ্যে ঢুকে পড়ত, এমন সময় মেয়েটা নাকিসুরে চীৎকার করে উঠল— বাবা, নচঞ্চুস্। দিলুম ঠাস করে গালে এক চড়, ভ্যাঁ করে উঠল কেঁদে, অমনি এক চমকে মন্তরটা নেমে পড়ল পিঙ্গলার মুখ থেকে একেবারে নাভীগহ্বর পর্যন্ত। সোহং ব্রহ্ম, সোহং ব্রহ্ম।
পুষ্প। তোমার গুরুর মন্তরটা কি অজীর্ণরোগের মতো। নাড়ির মধ্যে গিয়ে—
ফকির। হাঁ দিদি, নাড়ির মধ্যে ঘুটঘাট ঘুটঘাট করছেই— ওটা বায়ু কিনা।
পুষ্প। বায়ু নাকি।
ফকির। তা না তো কী। শব্দব্রহ্ম— ওতে বায়ু ছাড়া আর কিছুই নেই। ঋষিরা যখন কেবলই বায়ু খেতেন তখন কেবলই বানাতেন মন্তর।
পুষ্প। বল কী।
ফকির। নইলে অতটা বায়ু জমতে দিলে পেট যেত ফেটে। নাড়ী যেত পটপট করে ছিঁড়ে বিশখানা হয়ে।
পুষ্প। উঃ, তাই তো বটে— একেবারে চার-বেদ-ভরা মন্ত্র— কম হাওয়া তো লাগে নি।
ফকির। শুনলেই তো বুঝতে পার, ঐ-যে ও—ম্, ওটা তো নিছক বায়ু উদ্গার। পুণ্যবায়ু, জগৎ পবিত্র করে।
পুষ্প। এত সব জ্ঞানের কথা পেলে কোথা থেকে। আমরা হলে তো পাগল হয়ে যেতুম।
ফকির। সবই গুরুর মুখ থেকে। তিনি বলেন, কলিতে গুরুর মুখই গোমুখী— মন্ত্রগঙ্গা বেরচ্ছে কল্কল্ করে।
পুষ্প। বি. এ. তে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে খেটে মরেছি মিথ্যে। অজীর্ণ রোগেও ভুগেছি, সেটা কিন্তু পাকযন্ত্রের, ইড়াপিঙ্গলার নয়।
ফকির। এতেই বুঝে নাও— গুরুর কৃপা। তাই তো আমার নাড়ির মধ্যে মন্তরটা প্রায়ই ডাক ছাড়ে গুরু গুরু গুরু শব্দে।
পুষ্প। আচ্ছা, ডাকটা কি আহারের পরে বাড়ে।
ফকির। তা বাড়ে বটে।
পুষ্প। গুরু কী বলেন।
ফকির। তিনি বলেন, পেটের মধ্যে স্থূলে সূক্ষ্মে লড়াই, যেন দেবে দৈত্যে। খাদ্যের সঙ্গে মন্ত্রের বেধে যায় যেন গোলাগুলি-বর্ষণ, নাড়িগুলো উচ্চস্বরে গুরুকে স্মরণ করতে থাকে।