যাত্রা হয়ে আসে সারা, আয়ুর পশ্চিমপথশেষে
ঘনায় মৃত্যুর ছায়া এসে।
অস্তসূর্য আপনার দাক্ষিণ্যের শেষ বন্ধ টুটি
ছড়ায় ঐশ্বর্য তার ভরি দুই মুঠি।
বর্ণসমারোহে দীপ্ত মরণের দিগন্তের সীমা,
জীবনের হেরিনু মহিমা।
এই শেষ কথা নিয়ে নিশ্বাস আমার যাবে থামি —
কত ভালোবেসেছিনু আমি।
অনন্ত রহস্য তারি উচ্ছলি আপন চারি ধার
জীবন মৃত্যুরে দিল করি একাকার ;
বেদনার পাত্র মোর বারংবার দিবসে নিশীথে
ভরি দিল অপূর্ব অমৃতে।
দুঃখের দুর্গম পথে তীর্থযাত্রা করেছি একাকী,
হানিয়াছে দারুণ বৈশাখী।
কত দিন সঙ্গীহীন, কত রাত্রি দীপালোকহারা,
তারি মাঝে অন্তরেতে পেয়েছি ইশারা।
নিন্দার কণ্টকমাল্যে বক্ষ বিঁধিয়াছে বারে বারে,
বরমাল্য জানিয়াছি তারে।
আলোকিত ভুবনের মুখপানে চেয়ে নির্নিমেষ
বিস্ময়ের পাই নাই শেষ।
যে লক্ষ্মী আছেন নিত্য মাধুরীর পদ্ম-উপবনে,
পেয়েছি তাঁহার স্পর্শ সর্ব অঙ্গে-মনে।
যে-নিশ্বাস তরঙ্গিত নিখিলের অশ্রুতে হাসিতে,
তারে আমি ধরেছি বাঁশিতে।
যাঁহারা মানুষরূপে দৈববাণী অনির্বচনীয়
তাঁহাদের জেনেছি আত্মীয়।