মাধব দত্ত। (অমলের কানে কানে) বাবা, রাজা তোমাকে ভালোবাসেন, তিনি স্বয়ং আজ আসছেন —তাঁর কাছে আজ কিছু প্রার্থনা কোরো। আমাদের অবস্থা তো ভালো নয়। জান তো সব।
অমল। সে আমি সব ঠিক করে রেখেছি, পিসেমশায় —সে তোমার কোনো ভাবনা নেই।
মাধব দত্ত। কী ঠিক করেছ বাবা?
অমল। আমি তাঁর কাছে চাইব, তিনি যেন আমাকে তাঁর ডাকঘরের হরকরা করে দেন —আমি দেশে দেশে ঘরে ঘরে তাঁর চিঠি বিলি করব।
মাধব দত্ত। (ললাটে করাঘাত করিয়া) হায় আমার কপাল!
অমল। পিসেমশায়, রাজা আসবেন, তাঁর জন্যে কী ভোগ তৈরি রাখবে।
দূত। তিনি বলে দিয়েছেন তোমাদের এখানে তাঁর মুড়ি-মুড়কিরভোগ হবে।
অমল। মুড়ি-মুড়কি! মোড়লমশায়, তুমি তো আগেই বলে দিয়েছিলে, রাজার সব খবরই তুমি জান! আমরা তো কিছুই জানতুম না।
মোড়ল। আমার বাড়িতে যদি লোক পাঠিয়ে দাও তা হলে রাজার জন্যে ভালো ভালো কিছু –
রাজকবিরাজ। কোনো দরকার নেই। এইবার তোমরা সকলে স্থির হও। এল, এল, ওর ঘুম এল। আমি বালকের শিয়রের কাছে বসব —ওর ঘুম আসছে। প্রদীপের আলো নিবিয়ে দাও —এখন আকাশের তারাটি থেকে আলো আসুক, ওর ঘুম এসেছে।
মাধব দত্ত। (ঠাকুরদার প্রতি) ঠাকুরদা, তুমি অমন মূর্তিটির মতো হাতজোড় করে নীরব হয়ে আছ কেন? আমার কেমন ভয় হচ্ছে। এ যা দেখছি এ-সব কি ভালো লক্ষণ! এরা আমার ঘর অন্ধকার করে দিচ্ছে কেন! তারার আলোতে আমার কী হবে!
ঠাকুরদা। চুপ করো অবিশ্বাসী! কথা কোয়ো না।
সুধা। অমল।
রাজকবিরাজ। ও ঘুমিয়ে পড়েছে।
সুধা। আমি যে ওর জন্যে ফুল এনেছি —ওর হাতে কি দিতে পারব না?
রাজকবিরাজ। আচ্ছা, দাও তোমার ফুল।
সুধা। ও কখন জাগবে?
রাজকবিরাজ। এখনই, যখন রাজা এসে ওকে ডাকবেন।
সুধা। তখন তোমরা ওকে একটি কথা কানে কানে বলে দেবে?
রাজকবিরাজ। কী বলব?
সুধা। বোলো যে, ‘সুধা তোমাকে ভোলে নি’।