মাধব দত্ত। ওকি ও! ও কে ও! এ কী উৎপাত?
(বাহির হইতে) খোলো দ্বার।
মাধব দত্ত। কে তোমরা?
(বাহির হইতে) খোলো দ্বার।
মাধব দত্ত। মোড়লমশায়, এ তো ডাকাত নয়!
মোড়ল। কে রে? আমি পঞ্চানন মোড়ল। তোদের মনে ভয় নেই নাকি? দেখো একবার, শব্দ থেমেছে। পঞ্চাননের আওয়াজ পেলে আর রক্ষা নেই যত বড়ো ডাকাতই হোক না –
মাধব দত্ত। (জানলা দিয়া মুখ বাড়াইয়া) দ্বার যে ভেঙে ফেলেছে, তাই আর শব্দ নেই।
রাজদূত। মহারাজ আজ রাত্রে আসবেন।
মোড়ল। কী সর্বনাশ!
অমল। কত রাত্রে দূত? কত রাত্রে?
দূত। আজ দুই প্রহর রাত্রে।
অমল। যখন আমার বন্ধু প্রহরী নগরের সিংহদ্বারে ঘণ্টা বাজাবে ঢং ঢং ঢং, ঢং ঢং ঢং —তখন?
দূত। হাঁ, তখন। রাজা তাঁর বালক-বন্ধুটিকে দেখবার জন্যে তাঁর সকলের চেয়ে বড়ো কবিরাজকে পাঠিয়েছেন।
রাজকবিরাজ। একি! চারি দিকে সমস্তই যে বন্ধ! খুলে দাও, খুলে দাও, যত দ্বার-জানলা আছে সব খুলে দাও। —(অমলের গায়ে হাত দিয়া) বাবা, কেমন বোধ করছ?
অমল। খুব ভালো, খুব ভালো কবিরাজমশাই। আমার আর কোনো অসুখ নেই, কোনো বেদনা নেই। আঃ, সব খুলে দিয়েছ —সব তারাগুলি দেখতে পাচ্ছি —অন্ধকারের ওপারকার সব তারা।
রাজকবিরাজ। অর্ধরাত্রে যখন রাজা আসবেন তখন তুমি বিছানা ছেড়ে উঠে তাঁর সঙ্গে বেরোতে পারবে?
অমল। পারব, আমি পারব। বেরোতে পারলে আমি বাঁচি। আমি রাজাকে বলব, এই অন্ধকার আকাশে ধ্রুবতারাটিকে দেখিয়ে দাও। আমি সে তারা বোধ হয় কতবার দেখেছি কিন্তু সে যে কোন্টা সে তো আমি চিনি নে।
রাজকবিরাজ। তিনি সব চিনিয়ে দেবেন। (মাধবের প্রতি) এই ঘরটি রাজার আগমনের জন্যে পরিষ্কার করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখো। (মোড়লকে নির্দেশ করিয়া) ঐ লোকটিকে তো এ-ঘরে রাখা চলবে না।
অমল। না, না, কবিরাজমশায়, উনি আমার বন্ধু। তোমরা যখন আস নি উনিই আমাকে রাজার চিঠি এনে দিয়েছিলেন।
রাজকবিরাজ। আচ্ছা, বাবা, উনি যখন তোমার বন্ধু তখন উনিও এ-ঘরে রইলেন।