পঞ্চক। আবার কেন? তোরা যে ঐ এক কেনর জ্বালায় আমাকে অতিষ্ঠ করে তুললি।
তৃতীয় যূনক। আর, খেঁসারির ডাল?
পঞ্চক। একবার কোন্ যুগে একটা খেঁসারিডালের গুঁড়ো উপবাসের দিন কোন্-এক মস্ত বুড়োর ঠিক গোঁফের উপর উড়ে পড়েছিল; তাতে তাঁর উপবাসের পুণ্যফল থেকে ষষ্টিসহস্র ভাগের এক ভাগ কম পড়ে গিয়েছিল; তাই তখনই সেইখানে দাঁড়িয়ে উঠে তিনি জগতের সমস্ত খেঁসারিডালের ক্ষেতের উপর অভিশাপ দিয়ে গেছেন। এত-বড়ো তেজ! তোরা হলে কী করতিস বল দেখি!
প্রথম যূনক। আমাদের কথা বল কেন? উপবাসের দিনে খেঁসারিডাল যদি গোঁফের উপর পর্যন্ত এগিয়ে আসে তা হলে তাকে আরো একটু এগিয়ে নিই।
পঞ্চক। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, সত্যি করে বলিস —তোরা কি লোহার কাজ করে থাকিস?
প্রথম যূনক। লোহার কাজ করি বৈকি, খুব করি।
পঞ্চক। রাম রাম! আমরা সনাতন কাল থেকে কেবল তামা-পিতলের কাজ করে আসছি। লোহা গলাতে পারি কিন্তু সব দিন নয়। ষষ্ঠীর দিনে যদি মঙ্গলবার পড়ে তবেই স্নান করে আমরা হাপর ছুঁতে পারি কিন্তু তাই বলে লোহা পিটোনো সে তো হতেই পারে না।
প্রথম যূনক। কেন, লোহা কী অপরাধটা করেছে?
পঞ্চক। আরে, ওটা যে লোহা সে তো তোকে মানতেই হবে।
প্রথম যূনক। তা তো হবে।
পঞ্চক। তবে আর কি —এই বুঝে নে না।
দ্বিতীয় যূনক। তবু একটা তো কারণ আছে।
পঞ্চক। কারণ নিশ্চয়ই আছে কিন্তু কেবল সেটা পুঁথির মধ্যে। আচ্ছা, তোদের মন্ত্র কেউ পড়ায় নি?
দ্বিতীয় যূনক। মন্ত্র! কিসের মন্ত্র?
পঞ্চক। এই মনে কর, যেমন বজ্রবিদারণ মন্ত্র –তট তট তোতয় তোতয় –
তৃতীয় যূনক। ওর মানে কী?
পঞ্চক। আবার! মানে! তোর আস্পর্ধা তো কম নয়। সব কথাতেই মানে! কেয়ূরী মন্ত্রটা জানিস?
প্রথম যূনক। না।
পঞ্চক। মরীচী?
প্রথম যূনক। না।
পঞ্চক। মহাশীতবতী?
প্রথম যূনক। না।
পঞ্চক। উষ্ণীষবিজয়?
প্রথম যূনক। না।
পঞ্চক। নাপিত ক্ষৌর করতে করতে যেদিন তোদের বাঁ গালে রক্ত পাড়িয়ে দেয় সেদিন করিস কী?
তৃতীয় যূনক। সেদিন নাপিতের দুই গালে চড় কষিয়ে দিই।
পঞ্চক। না রে না, আমি বলছি সেদিন নদী পার হবার দরকার হলে তোরা খেয়া নৌকোয় উঠতে পারিস?