কেহ বহে মালা, কেহ বা চামর, কেহ বা তীর্থজল।
নীরবে সকলে দাঁড়ায়ে রহিল — বৃদ্ধ আসনে বসি
নীরবে গণনা করিতে লাগিল গৃহতলে খড়ি কষি।
আঁকিতে লাগিল কত না চক্র, কত না রেখার জাল,
গণনার শেষে কহিল ‘ এখন হয়েছে লগ্ন-কাল '।
শয়ন ছাড়িয়া উঠিল রমণী বদন করিয়া নত,
আমিও উঠিয়া দাঁড়াইনু পাশে মন্ত্রচালিতমত।
নারীগণ সবে ঘেরিয়া দাঁড়ালো একটি কথা না বলি
দোঁহাকার মাথে ফুলদল-সাথে বরষি লাজাঞ্জলি।
পুরোহিত শুধু মন্ত্র পড়িল আশিস করিয়া দোঁহে —
কী ভাষা কী কথা কিছু না বুঝিনু, দাঁড়ায়ে রহিনু মোহে।
অজানিত বধূ নীরবে সঁপিল শিহরিয়া কলেবর
হিমের মতন মোর করে তার তপ্ত কোমল কর।
চলি গেল ধীরে বৃদ্ধ বিপ্র, পশ্চাতে বাঁধি সার
গেল নারীদল মাথায় কক্ষে মঙ্গল-উপচার।
শুধু এক সখী দেখাইল পথ হাতে লয়ে দীপখানি —
মোরা দোঁহে পিছে চলিনু তাহার, কারো মুখে নাহি বাণী।
কত না দীর্ঘ আঁধার কক্ষ সভয়ে হইয়া পার
সহসা দেখিনু সমুখে কোথায় খুলে গেল এক দ্বার।
কী দেখিনু ঘরে কেমনে কহিব, হয়ে যায় মনোভুল,
নানা বরনের আলোক সেথায়, নানা বরনের ফুল।
কনকে রজতে রতনে জড়িত বসন বিছানো কত,
মণিবেদিকায় কুসুমশয়ন স্বপ্নরচিত-মতো।
পাদপীঠ- ' পরে চরণ প্রসারি শয়নে বসিলা বধূ —
আমি কহিলাম, ‘ সব দেখিলাম, তোমারে দেখি নি শুধু। '
চারি দিক হতে বাজিয়া উঠিল শত কৌতুকহাসি।
শত ফোয়ারায় উছসিল যেন পরিহাস রাশি রাশি।
সুধীরে রমণী দু-বাহু তুলিয়া, অবগুণ্ঠনখানি
উঠায়ে ধরিয়া মধুর হাসিল মুখে না কহিয়া বাণী।
চকিত নয়ানে হেরি মুখপানে পড়িনু চরণতলে,