আঁধার-ব্যাদান গুহার মাঝারে চলিনু তাহার পিছে।
ভিতরে খোদিত উদার প্রাসাদ শিলাস্তম্ভ- ' পরে,
কনকশিকলে সোনার প্রদীপ দুলিতেছে থরে থরে।
ভিত্তির গায়ে পাষাণমূর্তি চিত্রিত আছে কত,
অপরূপ পাখি, অপরূপ নারী, লতাপাতা নানা-মতো।
মাঝখানে আছে চাঁদোয়া খাটানো, মুক্তা ঝালরে গাঁথা —
তারি তলে মণিপালঙ্ক- ' পরে অমল শয়ন পাতা।
তারি দুই ধারে ধূপাধার হতে উঠিছে গন্ধধূপ,
সিংহবাহিনী নারীর প্রতিমা দুই পাশে অপরূপ।
নাহি কোনো লোক, নাহিকো প্রহরী, নাহি হেরি দাসদাসী।
গুহাগৃহতলে তিলেক শব্দ হয়ে উঠে রাশি রাশি।
নীরবে রমণী আবৃত বদনে বসিলা শয্যা- ' পরে,
অঙ্গুলি তুলি ইঙ্গিত করি পাশে বসাইল মোরে।
হিম হয়ে এল সর্বশরীর, শিহরি উঠিল প্রাণ —
শোণিতপ্রবাহে ধ্বনিতে লাগিল ভয়ের ভীষণ তান।
সহসা বাজিয়া বাজিয়া উঠিল দশ দিকে বীণা-বেণু,
মাথার উপরে ঝরিয়া ঝরিয়া পড়িল পুষ্পরেণু।
দ্বিগুণ আভায় জ্বলিয়া উঠিল দীপের আলোকরাশি —
ঘোমটা-ভিতরে হাসিল রমণী মধুর উচ্চহাসি।
সে হাসি ধ্বনিয়া ধ্বনিয়া উঠিল বিজন বিপুল ঘরে —
শুনিয়া চমকি ব্যাকুল হৃদয়ে কহিলাম জোড়করে,
‘ আমি যে বিদেশী অতিথি, আমায় ব্যথিয়ো না পরিহাসে,
কে তুমি নিদয় নীরব ললনা, কোথায় আনিলে দাসে। '
অমনি রমণী কনকদণ্ড আঘাত করিল ভূমে,
আঁধার হইয়া গেল সে ভবন রাশি রাশি ধূপধূমে।
বাজিয়া উঠিল শতেক শঙ্খ হুলুকলরব-সাথে —
প্রবেশ করিল বৃদ্ধ বিপ্র ধান্যদূর্বা হাতে।
পশ্চাতে তার বাঁধি দুই সার কিরাতনারীর দল