হেরো আজি নিদ্রিতা মেদিনী,
ঘরে ঘরে রুদ্ধ বাতায়ন। আমি একা
আছি জেগে, তুমি একাকিনী দেহো দেখা
এই বিশ্বসুপ্তিমাঝে, অসীম সুন্দর,
ত্রিলোকনন্দনমূর্তি। আমি যে কাতর
অনন্ত তৃষায়, আমি নিত্য নিদ্রাহীন,
সদা উৎকণ্ঠিত, আমি চিররাত্রিদিন
আনিতেছি অর্ঘ্যভার অন্তরমন্দিরে
অজ্ঞাত দেবতা লাগি — বাসনার তীরে
একা বসে গড়িতেছি কত যে প্রতিমা
আপন হৃদয় ভেঙে, নাহি তার সীমা।
আজি মোরে করো দয়া, এসো তুমি, অয়ি,
অপার রহস্য তব, হে রহস্যময়ী,
খুলে ফেলো — আজি ছিন্ন করে ফেলো ওই
চিরস্থির আচ্ছাদন অনন্ত অম্বর।
মৌনশান্ত অসীমতা নিশ্চল সাগর,
তারি মাঝখান হতে উঠে এসো ধীরে
তরুণী লক্ষ্মীর মতো হৃদয়ের তীরে
আঁখির সম্মুখে। সমস্ত প্রহরগুলি
ছিন্ন পুষ্পদলসম পড়ে যাক খুলি
তব চারি দিকে — বিদীর্ণ নিশীথখানি
খসে যাক নীচে। বক্ষ হতে লহো টানি
অঞ্চল তোমার, দাও অবারিত করি
শুভ্র ভাল, আঁখি হতে লহো অপসরি
উন্মুক্ত অলক। কোনো মর্ত দেখে নাই
যে দিব্য মুরতি আমারে দেখাও তাই
এ বিশ্রব্ধ রজনীতে নিস্তব্ধ বিরলে।
উৎসুক উন্মুখ চিত্ত চরণের তলে
চকিতে পরশ করো ; একটি চুম্বন
ললাটে রাখিয়া যাও, একান্ত নির্জন
সন্ধ্যার তারার মতো ; আলিঙ্গনস্মৃতি
অঙ্গে তরঙ্গিয়া দাও, অনন্তের গীতি