তা হলে তুমি বলতে চাও আমরা কিছুই জানি নে?
জানিই নে তো। সবাই মিলে ধরে নিয়েছি যে জানি, সেই আপোসে ধরে নেওয়ার উপরেই আমাদের কারবার।
কারবার তো ভালোই চলছে।
চলছে, কিন্তু এ সত্যযুগের চলা নয়। সেই কথাই তোমাদের বলছিলুম — সত্যযুগে মানুষ দেখার জানা জানত না, ছোঁওয়ার জানা জানত না, জানত একেবারে হওয়ার জানা।
মেয়েদের মন প্রত্যক্ষকে আঁকড়ে থাকে ; ভেবেছিলেম আমার কথাটা অত্যন্ত অবাস্তব ঠেকবে পুপুর কাছে, ভালোই লাগবে না। দেখলুম একটু ঔৎসুক্য হয়েছে। বললে, বেশ মজা।
একটু উত্তেজিত হয়ে উঠেই বললে, আচ্ছা, দাদামশায়, আজকাল তো সায়ান্সে অনেক বুজ্রুগি করছে ; মরা মানুষের গান শোনাচ্ছে, দূরের মানুষের চেহারা দেখাচ্ছে, আবার শুনছি সীসেকে সোনা করছে — তেমনি একদিন হয়তো এমন একটা বিদ্যুতের খেলা খেলাবে যে ইচ্ছে করলে একজন আর-একজনের মধ্যে মিলে যেতে পারবে।
অসম্ভব নয়। কিন্তু, তুমি তা হলে কী করবে। কিছুই লুকোতে পারবে না।
সর্বনাশ! সব মানুষেরই যে লুকোবার আছে অনেক।
লুকোনো আছে বলেই লুকোবার আছে। যদি কারও কিছুই লুকোনো না থাকত তা হলে দেখা - বিন্তি খেলার মতো সবার সব জেনেই লোকব্যবহার হত।
কিন্তু, লজ্জার কথা যে অনেক আছে।
লজ্জার কথা সকলেরই প্রকাশ হলে লজ্জার ধার চলে যেত।
আচ্ছা, আমার কথা কী বলতে যাচ্ছিলে তুমি।
সেদিন আমি তোমাকে জিগেস করছিলুম, তুমি যদি সত্যযুগে জন্মাতে তবে আপনাকে কী হয়ে দেখতে তোমার ইচ্ছে হত। তুমি ফস্ করে বলে ফেললে, কাবুলি বেড়াল।
পুপে মস্ত ক্ষাপা হয়ে বলে উঠল, কখ্খনো না। তুমি বানিয়ে বলছ।
আমার সত্যযুগটা আমার বানানো হতে পারে কিন্তু তোমার মুখের কথাটা তোমারই। ওটা ফস্ করে আমি - হেন বাচালও বানাতে পারতুম না।
এর থেকে তুমি কি মনে করেছিলে আমি খুব বোকা।
এই মনে করেছিলুম যে, কাবুলি বেড়ালের উপর অত্যন্ত লোভ করেছিলে অথচ কাবুলি বেড়াল পাবার পথ তোমার ছিল না, তোমার বাবা বেড়াল জন্তুটাকে দেখতে পারতেন না। আমার মতে সত্যযুগে বেড়াল কিনতেও হত না, পেতেও হত না, ইচ্ছে করলেই বেড়াল হতে পারা যেত।
মানষ ছিলুম, বেড়াল হলুম — এত কী সুবিধেটা হল। তার চেয়ে যে বেড়াল কেনাও ভালো, না কিনতে পারলে না পাওয়া ভালো।
ঐ দেখো, সত্যযুগের মহিমাটা মনে ধারণা করতে পারছ না। সত্যযুগের পুপে আপনার সীমানা বাড়িয়ে দিত বেড়ালের মধ্যে। সীমানা লোপ করত না। তুমি তুমিও থাকতে, বেড়ালও হতে। তোমার এ - সব কথার কোনো মানে নেই।
সত্যযুগের ভাষায় মানে আছে। সেদিন তো তোমাদের অধ্যাপক প্রমথবাবুর কাছে শুনেছিলে, আলোকের অণুপরমাণু বৃষ্টির মতো কণাবর্ষণও বটে আবার নদীর মতো তরঙ্গধারাও বটে। আমাদের সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝি, হয় এটা নয় ওটা ; কিন্তু বিজ্ঞানের