গান হবে রঙের সংগত। বড়ো সহজ হবে না। তান যখন ঠিকরে পড়তে থাকবে, ঝলক মারবে আকাশের দিকে দিকে। তখনকার তানসেনরা দিগন্তে অরোরা বোরিয়ালিস বানিয়ে দেবে।
আর, তোমার গদ্যকাব্য কী হবে বলো তো।
তাতে লোহার ইলেক্ট্রন্ও মিশবে, আবার সোনারও।
সেদিনকার দিদিমা পছন্দ করবে না।
আমার ভরসা আছে সেদিনকার আধুনিক নাতনিরা মুগ্ধ হয়ে যাবে।
তা হলে সেই আলোর যুগে তোমার নাতনি হয়েই জন্মাব। এবারকার মতো দেহধারিণীর 'পরে ধৈর্য রক্ষা কোরো। এখন চললুম সিনেমায়।
কিসের পালা।
বৈদেহীর বনবাস।
পরদিন সকালবেলায় প্রাতরাশে আমার নির্দেশমত পুপেদিদি নিয়ে এল পাথরের পাত্রে ছোলাভিজে এবং গুড়। বর্তমান যুগে পুরাকালীন গৌড়ীয় খাদ্যবিধির রেনেসাঁস - প্রবর্তনে লেগেছি। দিদিমণি জিগেস করলে, চা হবে কি।
আমি বললুম, না, খেজুর - রস।
দিদি বললে, আজ তোমার মুখখানা অমন দেখছি কেন। কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখছ না কি।
আমি বললুম, স্বপ্নের ছায়া তো মনের উপর দিয়ে যাওয়া - আসা করছেই — স্বপ্নও মিলিয়ে যায়, ছায়ারও চিহ্ন থাকে না। আজ তোমার ছেলেমানুষির একটা কথা বারবার মনে পড়ছে, ইচ্ছে করছে বলি।
বলো - না।
সেদিন লেখা বন্ধ করে বারান্দায় বসে ছিলুম। তুমি ছিলে, সুকুমারও ছিল। সন্ধে হয়ে এল, রাস্তার বাতি জ্বালিয়ে গেল, আমি বসে বসে সত্যযুগের কথা বানিয়ে বানিয়ে বলছিলুম।
বানিয়ে বলছিলে! তার মানে ওটাকে অসত্যযুগ করে তুলছিলে।
ওকে অসত্য বলে না। যে রশ্মি বেগ্নির সীমা পেরিয়ে গেছে তাকে দেখা যায় না বলেই সে মিথ্যে নয়, সেও আলো। ইতিহাসের সেই বেগ্নি পেরোনো আলোতেই মানুষের সত্যযুগের সৃষ্টি। তাকে প্রাগৈতিহাসিক বলব না, সে আলট্রা - ঐতিহাসিক।
আর তোমার ব্যাখ্যা করতে হবে না। কী বলছিলে বলো।
আমি তোমাদের বলছিলুম, সত্যযুগে মানুষ বই পড়ে শিখত না, খবর শুনে জানত না, তাদের জানা ছিল হয়ে - উঠে জানা।
কী মানে হল বুঝতে পারছি নে।
একটু মন দিয়ে শোনো বলি। বোধ হয় তোমার বিশ্বাস তুমি আমাকে জান?
দৃঢ় বিশ্বাস।
জান কিন্তু সে জানায় সাড়ে - পনেরো আনাই বাদ পড়ে গেছে। ইচ্ছে করলেই তুমি যদি ভিতরে ভিতরে আমি হয়ে যেতে পারতে তা হলেই তোমার জানাটা সম্পূর্ণ সত্য হত।