বুঝলুম, কিন্তু কানাইয়ের ইচ্ছার সীমানাটা —
বাড়িয়েছি বৈকি। পূর্ববঙ্গের লোক, কলাইয়ের ডালের নাম শুনতে পারত না। আজকাল হিঙ দিয়ে কলাইয়ের ডাল ও খাচ্ছে বেশ।
এমন সময়ে কানাইয়ের পুনঃপ্রবেশ। বললে, একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, আজ দইটা আনি নি। কবরেজমশায় বলেন, রাত্রে দইটা বারণ।
দইয়ের দাম চড়ে গেছে বললে দ্বিরুক্তি হয়, এইজন্যে কবরেজমশায়কে পাড়তে হল। সান্ত্বনা দেবার জন্যে বললে, অল্প একটু আদার রস মিশিয়ে পাতলা চা বানিয়ে দেব, শীতের রাত্রে উপকার দেবে।
আমি জিগেস করলেম, কী বল হে মাস্টার, আদা দিয়ে চা সবাইকে খাওয়াবে না কি।
সবাইকার কথা বলব কী করে। যারা খাবে তারা খাবে। হতে পারে উপকার। যারা খাবে না তাদের অপকার হবে না।
আমি বললুম, মাস্টার, চীন - দার্শনিকের উপদেশমতে তোমার গেরস্থালিতে মনিব নেই বুঝি?
না।
তা হলে চাকরই বা আছে কেন।
মনিব না থাকলেই চাকর স্বতই থাকে না।
তোমার এখানে চাকরে মনিবে বেমালুম মিশিয়ে গিয়ে একটা যৌগিক পদার্থ খাড়া হয়েছে বুঝি?
মাস্টার হেসে বললে, অক্সিজেন হাইড্রোজেন দাহ্য মেজাজ ঘুচে দোঁহে মিলে একেবারে জল।
আমি বললুম, যদি বিয়ে করতে ভায়া, পাড়া ছেড়ে চীনের দর্শন দৌড় দিত। থেকেও থাকবে না, গিন্নি এমন নির্বিশেষ পদার্থ নয়। মুখের উপর ঘোমটা টেনেও তোমার সংসারে সে হত অতিশয় স্পষ্ট। তার রাজ্যে রাজত্বটা তার কটাক্ষে খেত দোলা ; সর্বদা ধাক্কা লাগাত, কখনো পিঠে, কখনো বুকে।
মাস্টার বললে, তা হলে কর্তা রিটর্ন্ টিকিট না কিনেই দৌড় মারত ডেরাগাঁজিখাঁয়ে, গিন্নিত্ব অন্তর্ধান করতে ইস্টার্ন্ বেঙ্গল রেলের রাস্তা বেয়ে বাপের বাড়িতে।
মাস্টার মাঝে মাঝে হাসির কথা বলে, কিন্তু হাসে না।
পুপুদিদি বললে, আমাদের মাস্টারমশায়কে নিয়ে যদি গল্পের পালা বাঁধতে হয় কিরকম করে বাঁধ।
তা হলে দশ লক্ষ বছর বাদ দিই।
তার মানে, আজগুবি গল্প বানাতে, অথচ আজকের দিনের বিরুদ্ধ - পক্ষের সাক্ষীর শঙ্কা থাকত না।
কোনো সাহিত্যওয়ালা কখনো সাক্ষীর ভয় করে না। আসল কথা, আমার গল্পটা ফুটে উঠতে যুগান্তরের দরকার করবে। কেন, সেইটে বুঝিয়ে বলি — পৃথিবী - সৃষ্টির গোড়াকার মালমসলা ছিল পাথর লোহা প্রভৃতি মোটামোটা ভারী ভারী জিনিস। তারই ঢালাই পেটাই চলেছিল অনেককাল। কঠোরের বে - আব্রুতা ছিল বহু যুগ ধরে। অবশেষে নরম মাটি পৃথিবীকে শ্যামল আস্তরণে ঢাকা দিয়ে সৃষ্টিকর্তার যেন লজ্জা রক্ষা করলে। তখন জীবজন্তু আসরে নামল স্তূপাকার হাড়মাংসের বোঝাই নিয়ে ; মোটা মোটা বর্ম পরে তারা দুশো পাঁচশো মোন অসভ্য লেজ টেনে টেনে বেড়াতে লাগল। তারা ছিল দর্শনধারী জীব। কিন্তু সেই মাংসবাহীর দল সৃষ্টিকর্তার পছন্দসই হল না। আবার চলল বহু যুগে ধরে নিষ্ঠুর পরীক্ষা। শেষকালে এল মনোবাহী মানুষ। লেজের