আমি বললুম, তার কারণ, প্রমাণ সত্ত্বেও তোমার কম বুদ্ধির লক্ষণ মাস্টার লক্ষ্য করতেন না।
পুপে মাথা ঝাঁকিয়ে বললে, এটাকে কি গাল বলব না ঠাট্টা।
আমি বললুম, পাশ দিয়ে যেতে যেতে তোমার চুলটা টেনে দিই, এ ঠাট্টা সেই স্নিগ্ধ জাতের। এতে ক্যাসাস ব্যালাই অর্থাৎ ‘অদ্য যুদ্ধ ত্বয়া ময়া'র ঘোষণা নেই।
পুপে বললে, মাস্টারমশায়ের ব্যবস্থা ছিল মজার রকমের। তিনি বলতেন, তোমাদের নিজের খবর নিজেই রাখবে ; তোমাদের খবরদারি করবার কাজ আমার নয়। প্রতিদিনের পড়ার ফল নিজেরাই রাখতুম ; মার্কা দেবার নিয়ম জানা ছিল।
তার ফল কী হল।
মার্কা বরঞ্চ কম করেই দিতুম।
কখনো কি ঠকাতে না।
বাইরের কেউ মার্কা দেবার থাকলে তাকে ঠকাবার লোভ হতে পারত। নিজেকে ঠকানো বোকামি। বিশেষত তিনি তো দেখতেন না।
তার পরে?
তার পরে প্রত্যেক তিন মাস অন্তর নিজেরাই হিসেব করে জানতুম উঠছি কি নাবছি।
তোমাদের কি সত্যযুগের হাইস্কুল, অত্যন্ত হাই? ফাঁকি দেবার লোকই বুঝি ছিল না?
মাস্টারমশায় ছিলেন অবিচলিত। তিনি বলতেন, সংসারে একদল লোক ফাঁকি দেবেই। কিন্তু, নিজের দায় যাদের নিজের হাতে, ওরই মধ্যে তারাই কম ফাঁকি দেয়। আমাদের শাস্তিও ছিল ঐ জাতের। বাইরে থেকে না। একদিন হাজিরি নাম - ডাক উপলক্ষে প্রিয়সখীর পর্সেণ্টেজ বাঁচাবার জন্যে মিথ্যে কথা বলে ফেলেছিলুম। তিনি বললেন, অশুচি হয়েছ, প্রায়শ্চিত্ত কোরো। তিনি জানতেও চাইতেন না করেছি কি না।
প্রায়শ্চিত্ত কি করেছিলে।
নিশ্চয়ই করেছিলুম।
অর্থাৎ, তোমার পাউডারের কৌটোটা ঐ প্রিয়সখীকে দান করেছিলে?
আমি কখ্খনো পাউডর মাখি নে।
বলতে চাও, তোমার ঐ মুখের রঙ তোমার খাস নিজেরই?
আর যাই হোক তোমার কাছ থেকে ধার নিই নি, মিলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবে।
ছি, আমাকে নিয়ে তোমার দৃষ্টিতে যদি ভেদবুদ্ধি দেখা দেয় তা হলে জাতে দোষারোপ ঘটে। আমরা যে সবর্ণ — বর্ণভেদের জো কী। হাতের কাছে কবি থাকলে বলতেন, তোমার গায়ের রঙ ফুটে বেরিয়েছে ব্রহ্মার হাসি থেকে।
আর তোমার রঙ তাঁর ঠাট্টার হাসি থেকে।
একেই বলে অন্যোন্যস্তুতি, ম্যুচূয়ল অ্যাড্মিরেশন। পিতামহের দুই জাতের হাসি আছে — একটা দন্ত্য, একটা মূর্ধন্য। আমাতে লেগেছে মূর্ধন্য হাসি, ইংরেজিতে তাকে বলে উইট।
দাদামশায়, নিজের গুণগান তোমার মুখে কখনো বাধে না।
সেইটেই আমার প্রধান গুণ। আপনাকে যারা জানে আমি সেই অসামান্যের দলে।
মুখ খুলে গেছে, কিন্তু আর নয়, এবার থামো। মাস্টারমশায়ের কথা হচ্ছিল, এখন উঠে পড়ল তোমার নিজের কথা।